বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা মানবজাতির জন্য আশীর্বাদ নাকি হুমকি?1 min read

জুন ১৪, ২০১৯ 3 min read

author:

কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা মানবজাতির জন্য আশীর্বাদ নাকি হুমকি?1 min read

Reading Time: 3 minutes

ছোট থাকতে আমাদের অনেকেরই অবসর সময় কেটেছে কম্পিউটারে গেম খেলে। কম্পিউটারে দাবা খেলা অনেকের কাছে বিরক্তিকর হলেও, অনেকের কাছেই আবার এটি অন্যরকম একটি ফ্যাসিনেশন। মজার বিষয় হল, এই খেলার ডিফিকাল্টি লেভেল একটু এই দিক ঐ দিক করে দিলেই কম্পিউটারের সাথে জেতা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি কম্পিউটার কিভাবে মানুষের মতো খেলছে? কীভাবে নিখুঁত চাল দিয়ে আমাদের হারিয়ে দিচ্ছে?

প্রযুক্তি নিয়ে খোঁজ খবর রাতে এমন মানুষ মাত্রই জানে এটি ছিল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অর্থাৎ কৃত্তিম  বুদ্ধিমত্তার একটি ছোট চমক। যতই দিন যাচ্ছে কৃত্তিম  বুদ্ধিমত্তার প্রভাব আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বেড়েই চলছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি?

বিগত কয়েক বছর ধরে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা পুরো পৃথিবীকে এক অন্য রূপ দিয়েছে। বলতে গেলে পুরো পৃথিবীটা এখন কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার দখলে। একের পর এক সাড়া জাগানো উদ্ভাবনের মাধ্যমে প্রযুক্তির এক নতুন প্রবর্তন হয়েছে।

মানুষের চিন্তাশক্তি ও বুদ্ধিমত্তাকে অনুকরণ করে যান্ত্রিক উপায়ে বাস্তবায়ন করাই হল কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা। এক কথায় কম্পিউটারের মানুষের মত ভাবতে পারা বা চিন্তা করতে পারাটাই কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা।

মানুষ যেভাবে তার পূর্ব অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে কোন সিদ্ধান্ত নেয়, একটি যন্ত্রও তেমনই এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে যেকোন সমস্যার বিশ্লেষণ করে সমাধান করতে পারে।

কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন একটি যন্ত্র শুধু সমস্যার সমাধানই নয়, এটি বিভিন্ন রকম ডাটা এনালাইসিসের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে এবং প্রতিনিয়ত পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে নিজেকে অধিকতর বুদ্ধিমান তৈরি করে নিতে পারে। এক কথায়, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা হচ্ছে মেশিন দ্বারা প্রদর্শিত মানব বুদ্ধি।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার

কম্পিউটার সফটওয়্যার , ওয়েবসাইট, রোবট, এছাড়াও বিভিন্ন মেশিনে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের ছোট বড় বেশিরভাগ টেকনোলজি কোম্পানি যেমন, গুগল, অ্যাপল, মাইক্রোসফট, অ্যামাজন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে সফলতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। তাছাড়াও নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টগুলো পরিচালিত হচ্ছে এ সিস্টেমে।

মার্কেটিং, রিসার্চ, ব্যাংকিং, ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, টেলিকমিউনিকেশন, স্বাস্থ্য, শহর ব্যবস্থাপনা, আবহাওয়া, সাইবার নিরাপত্তাসহ আরও অনেক ক্ষেত্রে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার রয়েছে। দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রযুক্তি পণ্যেও যুক্ত হয়েছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। বলতে গেলে বর্তমানের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার রয়েছে।

বিজ্ঞানীরা সম্পূর্ণভাবে এই বিষয়ে এখনো পারদর্শিতা দেখাতে না পারলেও, আশা করা যায় ভবিষ্যতে প্রায় সব কাজই হবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ইতিহাস

রুশম’স ইউনিভার্সাল রোবটস” নামে  একটি সায়েন্স ফিকশন ১৯২০ সালে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে ধারনা দিয়ে থাকে। কিন্তু তখন তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় নি। মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পরই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের উদ্ভব হয়। কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণা শুরু হয়।

১৯৫০ সালে এলান টিউরিং একটি মেশিন বুদ্ধিমান কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য “টিউরিং টেস্ট” নামের একটি টেস্টের কথা উল্লেখ করেন। ওই সময় অনেক গবেষণা হলেও কম্পিউটার প্রযুক্তি কম  শক্তি সম্পন্ন থাকায় তখন এই টেস্ট তেমন আলোর মুখ দেখেনি। তবুও এলান টিউরিং যেহেতু প্রথম কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার  ধারণা দিয়েছেন, তাই তাকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

পরবর্তী সময়ে কম্পিউটার প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতি হয়। ফলে আবার নতুন করে গবেষণা শুরু হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় তিনটি টেক কোম্পানি ফেসবুক, গুগল ও আমাজন একত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর রিসার্চ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। কোন  রকম কৃপণতা ছাড়া তারা এই বিষয়ে গবেষণার জন্য প্রচুর অর্থও ব্যয় করছে।

কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎ

কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা এর সাথে মানুষ তার চিন্তাধারা মিশে আরও ভাল কিছু করতে পারবে, যা ভবিষ্যৎ চিন্তা শক্তিকে বদলে দিবে। এছাড়াও কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ও মানুষের বুদ্ধিমত্তা একত্রিত হয়ে মানুষের যে কোন জটিল রোগ যেমন ক্যন্সার, প্রোজিরিয়া ইত্যাদি আগে থেকে সনাক্ত করতে পারবে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে আগে থেকেই রোগীর রোগের ধরণ, রোগের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যাবে। তাই ডাক্তার দ্রুতরোগীর সঠিক চিকিৎসা দিতে পারবে ও সুস্থ করে তুলতে পারবে।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিয়ে কম্পিউটার যে কোন বিষয়ের উপর তথ্য নির্ভুল ভাবে বিশ্লেষণ করতে সক্ষম। তাই এটাকে কাজে লাগিয়ে মানুষ মানবিক সংকট, জটিল পরিবেশগত উদ্বেগ,আবহাওয়া পরিবর্তন, দরিদ্রতা ইত্যাদি সমস্যা থেকে খুব সহজেই উত্তরণের পথ খুঁজে বের করতে পারে। যা পৃথিবীকে  আরও অনেক দিন বসবাসেরযোগ্য করতে সাহায্য  করবে।

কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার

যেসব পাঠক এতক্ষণ ধৈর্য ধরে এই লেখাটি পড়ছেন, তারা হয়ত ভাবছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি সূচকীয় হারে বাড়ছে, এর মধ্যে আবার দুশ্চিন্তা বা ভয়ের কি আছে, তারা এবার নড়ে চড়ে বসুন।

কারণ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে কোন যন্ত্র যেহেতু মানুষের মত ভাবতে ও সিদ্ধান্ত নিতে পারে সেহেতু মানুষের মধ্যে যেমন ভাল খারাপ দুটোই রয়েছে  ঠিক তেমনই এমনও হতে পারে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন যন্ত্র আপনার সাথে মিথ্যে বলল, প্রতারণা করল, কিংবা স্বার্থপর হল।

এছাড়াও এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ভুয়া ভিডিও তৈরি করে তার অপব্যবহার করে জনমতে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করা যেতে পারে। শত্রুতার জের ধরে কোন ব্যক্তি ড্রোন কিনে সেটিকে প্রশিক্ষিত করে তুলতে পারে এবং তারপর কোন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে তার ওপর আক্রমণ চালাতে পারে।

পরিশেষে বলা যায়, এখনই যদি আমরা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাপারে সতর্ক না হই, তবে ভবিষ্যতে এর  ক্ষমতা কোনসন্ত্রাসী কিংবা খারাপ মানুষের হাতে পড়ে গোটা পৃথিবীটা ধ্বংসের সম্মুখীন হয়ে যেতে পারে। তাই সকলেরই কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তারউপব্যবহার নিয়ে জানতে হবে এবং সঠিক ব্যবহার করতে হবে।

তাছাড়া দৈনন্দিন জীবনে শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষিসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নানা প্রয়োজনে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সঠিকভাবে ব্যবহার করে আমরা আমাদের জীবনকে আরও সহজ করতে পারছি, আগামীতেও পারব।কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে ভয়ঙ্কর আশঙ্কা থাকলেও প্রযুক্তির চরম উন্নতি মানুষের কল্যাণ বয়ে আনবে সেটাই সবার প্রত্যাশা।

লেখক- ইশরাত পর্ণা

আরও পড়ুন-  সোফিয়ারা একদিন বিশ্ব দখলে নেবে?

আরও পড়ুন- এলিয়েন আছে, এলিয়েন নেই!

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *