ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামের কাছে বৈসারণে ভয়াবহ বন্দুকধারীর হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৬ জন। দেশ-বিদেশের পর্যটকে ঠাসা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য খ্যাত এই এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে অতর্কিত গুলিবর্ষণ চালানো হয়। ভয়াবহ এই হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তান-ভিত্তিক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার (এলইটি) প্রক্সি গোষ্ঠী ‘রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)। খবর: এনডিটিভি
এর আগে সামাজিক মাধ্যমে আরটিএফ-এর একটি বিবৃতি ছড়িয়ে পড়ে। বিবৃতি দাবি করা হয়, ভারত অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে এখন পর্যন্ত ৮৫ হাজারের বেশি বসবাসের অধিকার (ডোমিসাইল) দেওয়া হয়েছে কাশ্মীরের বাইরের বাসিন্দাদের। এভাবে জনসংখ্যার কাঠামো বদলানোর চেষ্টা চলছে। এরা পর্যটক সেজে আসে, ডোমিসাইল সংগ্রহ করে এবং পরে নিজেরা অঞ্চলের মালিকের মতো আচরণ শুরু করে।
এদিকে জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের উপর ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ভারতীয় নৌবাহিনীর এক তরুণ কর্মকর্তা এবং গোয়েন্দা সংস্থার (আইবি) এক কর্মকর্তা।
হরিয়ানার কর্নালের বাসিন্দা ২৬ বছর বয়সী লেফটেন্যান্ট বিনয় নারওয়াল সদ্য বিবাহিত ছিলেন। কোচিতে কর্মরত এই নৌবাহিনী কর্মকর্তা সম্প্রতি ছুটিতে কাশ্মীরে ঘুরতে গিয়েছিলেন। সূত্র জানায়, ১৬ এপ্রিল তার বিয়ে হয়। নবদম্পতির জন্য এই সফর ছিল এক ছোট্ট আনন্দভ্রমণ।
এছাড়া এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও একজন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তা—গোয়েন্দা সংস্থা আইবির সদস্য মানীশ রঞ্জন। বিহারের বাসিন্দা মানীশ হায়দরাবাদের আইবি দপ্তরে মন্ত্রিসভা বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
এর আগে, ২০১৯ সালের অক্টোবরে গঠিত আরটিএফ-কে কাশ্মীরে স্থানীদের দিয়ে সশস্ত্র আন্দোলন চালানোর উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল বলে ভারতীয় গোয়েন্দা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। সংগঠনের সর্বোচ্চ কমান্ডার ছিলেন শেখ সাজ্জাদ গুল এবং অপারেশনাল প্রধান হিসেবে ছিলেন বাসিত আহমেদ দার। আরটিএফ মূলত হিজবুল মুজাহিদিন ও লস্কর-ই-তৈয়বার সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল।
ভারত সরকার আরটিএফ-কে লস্কর-ই-তৈয়বার একটি ছদ্ম-সংগঠন বা ‘প্রক্সি ফ্রন্ট’ বলে উল্লেখ করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০১৯ সালের আগস্টে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের (অনুচ্ছেদ ৩৭০) পর সৃষ্ট উত্তেজনার সুযোগে এই সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। শেখ সাজ্জাদ গুল, যিনি ১৯৭৪ সালের ১০ অক্টোবর শ্রীনগরে জন্মগ্রহণ করেন, ২০২২ সালে ভারত সরকার কর্তৃক সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষিত হন।