করোনাভাইরাস সংক্রান্ত যত ভ্রান্ত ধারণা 1 min read
Reading Time: 3 minutesকরোনাভাইরাসের আঘাতে সারাবিশ্ব যেন থমকে গেছে। ভয়াবহ এই ভাইরাস নিয়ে তাই জল্পনাকল্পনার শেষ নেই। সঠিক তথ্যের চেয়ে যেন ভুল তথ্যই বেশি ছড়িয়ে যাচ্ছে চারিদিকে। মানুষ হচ্ছে বিভ্রান্ত, বাড়ছে অসচেতনতা। এইরকম কিছু বহুল প্রচলিত গুজব এবং তার সঠিক ব্যাখ্যা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
ভুল তথ্য ১ঃ করোনাভাইরাস উষ্ণ তাপমাত্রায় ছড়ায় না
সঠিক তথ্যঃ কোভিড-১৯ ভাইরাস যে কোন তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতায় ছড়াতে এবং মানুষকে আক্রান্ত করতে সক্ষম। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসের গতি প্রকৃতি বলছে গরমের দেশ হোক কিংবা ঠাণ্ডার, যে কোন জায়গাতেই এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। তবে গবেষকরা আশা করছেন গ্রীষ্মকালে এই ভাইরাস সেভাবে ছড়াবে না। যদি তা না হয় তবে ফ্লু ভাইরাসের ক্ষেত্রে সেটি হবে একটি ব্যতিক্রমী উদাহরণ।
ভুল তথ্য ২ঃ কম তাপমাত্রা এবং তুষারপাতে করোনাভাইরাসের মৃত্যু ঘটে
সঠিক তথ্যঃ এটা বিশ্বাস করার কোন অবকাশ নেই যে কম তাপমাত্রায় করোনা বা যেকোন ভাইরাসের মৃত্য হতে পারে। কারণ বাইরের তাপমাত্রা যাই হোক না কেন মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এটি টিকে থাকতে পারে।
ভুল তথ্য ৩ঃ গরমপানিতে গোসল করলে করোনা প্রতিরোধ সম্ভব
সঠিক তথ্যঃ গরম পানি দিয়ে গোসল করা করোনাভাইরাসের উপর কোনরকম প্রভাব ফেলবে না। সাধারণত গরম পানিতে গোসল করার সময় মানব শরীরের তাপমাত্রা থাকে ৩৬.৫°সেলসিয়াস থেকে ৩৭° সেলসিয়াস। এ তাপমাত্রা কোভিড-১৯ এর জন্য অনুকূল। তাই ভাইরাসটির কোন ক্ষতি না হলেও অতিরিক্ত গরম পানিতে আপনার ত্বকের মাশুল গুনতে হতে পারে। তারচেয়ে পরিষ্কার পানিতে বারবার হাত ধোয়া, নাকে চোখে, মুখে হাত না দেওয়া শ্রেয়।
ভুল তথ্য ৪ঃ মশার কামড়ের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়ায়
সঠিক তথ্যঃ এখন পর্যন্ত এমন কোন তথ্য নিশ্চিতভাবে পাওয়া যায়নি। এ ভাইরাস মূলত ছড়িয়ে থাকে আক্রান্ত ব্যাক্তির থুথু, কফ বা লালার মাধ্যমে এবং এই ভাইরাস আক্রমণ করে ফুসফুসকে। তাই আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে তাই নিরাপদ দূরত্ব রাখতে হবে। এড়িয়ে চলতে হবে জনসমাগম।
ভুল তথ্য ৫ঃ হ্যান্ড ড্রায়ার দিয়ে করোনাভাইরাসকে মারা যায়
সঠিক তথ্যঃ হ্যান্ড ড্রায়ার দিয়ে হাত শুষ্ক করার মাধ্যমে করোনাভাইরাসকে মারা যায় না। হাত সাবান দিয়ে ভালোমতো ধোঁয়ার পরে শুকনো পরিষ্কার কাপড়, টিস্যু বা হ্যান্ড ড্রায়ার দিয়ে হাত শুকানো যেতে পারে।
ভুল তথ্য ৬ঃ আল্ট্রা-ভায়োলেট বা অতিবেগুনী রশ্মি দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করা যাবে।
সঠিক তথ্যঃ হাত বা শরীরের অন্যান্য অংশ জীবাণুমুক্ত করতে এখন পর্যন্ত ইউভি রশ্মি ব্যবহার করা হয়নি। বরং এ কাজ করলে আপনার ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
ভুল তথ্য ৭ঃ থার্মাল স্ক্যানার এ ভাইরাস ধরতে পারে
সঠিক তথ্যঃ থার্মাল স্ক্যানার আমাদের জ্বর মাপার জন্য থার্মোমিটার হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এটির মাধ্যমে জানা যায় কারো শরীরে জ্বর আছে কিনা। কিন্তু জ্বর ভাইরাসের কারণে হয়েছে কিনা থার্মাল স্ক্যানার তা জানাতে পারে না। ভাইরাসটিকে শনাক্ত করতেও এটি ব্যর্থ। ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে জ্বর উঠা সংক্রমণের একটি লক্ষণ। কিন্তু এ লক্ষণ প্রকাশ পেতে দুই দিন থেকে দশদিন সময়ও লাগতে পারে। থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সাথে সাথে ধরে ফেলা সম্ভব হয় এবং তাকে আলাদা করে ফেলাটা সহজ হয়।
ভুল তথ্য ৮ঃ শরীরে এলকোহল বা ক্লোরিন ঢাললে ভাইরাস মারা যাবে
সঠিক তথ্যঃ করোনাভাইরাস একবার আমাদের শরীরের ভিতরে ঢুকে গেলে তা সহজেই ফুসফুসকে আক্রান্ত করে ফেলে। তাই শরীরে এলকোহল বা ক্লোরিন ঢেলে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। বরং শরীরে অতিরিক্ত এলকোহল স্প্রে করলে ত্বক ( বিশেষত মুখ, চোখ) এবং কাপড়ের ক্ষতি হতে পারে। আসবাবপত্র বা দেয়াল জীবাণুমুক্ত করার জন্য এগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে তা করতে হবে অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে।
ভুল তথ্য ৯ঃ নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন দিয়ে করোনা ভাইরাসের চিকিৎসা করা যায়
সঠিক তথ্যঃ না। নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন হিসাবে ব্যবহৃত নিউমোকোক্কাল ভ্যাকসিন এবং হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি( এইচআইভি) ভ্যাকসিন করোনাভাইরাসের উপর কোনরকম প্রভাবই ফেলতে পারেনা। নিউমোনিয়ার জীবাণু এই ভাইরাস থেকে যথেষ্ট আলাদা। এক ভাইরাসের ভ্যাক্সিন সাধারণত অন্য ভাইরাসের উপর কাজ করেনা। এই ভাইরাসটি একদমই নতুন এবং বিজ্ঞানীরা এর ভ্যাক্সিন আবিষ্কারের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) তাদেরকে সর্বাত্মক সাহায্য করে যাচ্ছে।
তবে এই ভাইরাসটি যেহেতু ফুসফুসকে আক্রমণ করে, তাই ফুসফুসের সংক্রমণের জন্য ভ্যাকসিন চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে। তবে সেটা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে।
ভুল তথ্য ১০ঃ স্যালাইনের জল দিয়ে নাক পরিষ্কার করলে এই অসুখ সেরে যায়
সঠিক তথ্যঃ না। স্যালাইনের জল দিয়ে নাক পরিষ্কার করলে এই ভাইরাসের দ্বারা তৈরি হওয়া ইনফেকশন সেরে যায় এমন কোন প্রমাণ নেই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাধারণ সর্দি কাশি থেকে তাড়াতাড়ি সেরে উঠা যায়। কিন্তু এটা ইনফেকশন সারাতে পারেনা।
ভুল তথ্য ১১ঃ আদা/রসুন খেলে এই ইনফেকশন হয় না
সঠিক তথ্যঃ আদা/রসুন খুবই স্বাস্থ্যকর খাবার যাতে অনেক ধরণের উপকারী জীবাণুনাশক থাকে। কিন্তু এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি যাতে দেখা গেছে, বর্তমান করোনাভাইরাস সংক্রমণে কেউ আদা/রসুন খেয়ে নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছেন।
ভুল তথ্য ১২ঃ করোনাভাইরাস শুধুমাত্র বয়স্ক মানুষদেরই আক্রমণ করে
সঠিক তথ্যঃ এই ভাইরাসে যে কেউই আক্রান্ত হতে পারেন। তবে যাদের বয়স বেশী এবং আগে থেকে ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, হৃদরোগ এমন বিভিন্ন অসুখে ভুগছেন তাদের এ ভাইরাসে বেশী আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সকল বয়সের সবাইকেই সমানভাবে সাবধানতা অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছে।
ভুল তথ্য ১৩ঃ এন্টিবায়োটিক দিয়ে এ ভাইরাস মারা যাবে
সঠিক তথ্যঃ এন্টিবায়োটিক দিয়ে ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, ভাইরাস নয়। তবে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়লে যদি আপনার শরীরে কোন ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনও দেখা দেয় তাহলে ডাক্তার আপনাকে এন্টিবায়োটিক দিতে পারেন।
করোনা সম্পর্কে কোন তত্ত্ব বা ধারণা নয় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সতর্কতা। ব্যক্তিগত জায়গা থেকে সচেতন থাকলে করোনা ঝুঁকি এড়ান যাবে। সেই সাথে যেকোন অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া দরকার। সচেতনতাই পারে করোনার গ্রাস থেকে এ পৃথিবীকে বাঁচাতে।
লেখক- ঐশ্বর্য মীম
আরও পড়ুন- করোনা ঠেকাতে করণীয়
আরও পড়ুন- করোনাভাইরাস নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব কেন বিশ্বাসযোগ্য নয়
আরও পড়ুন- একটি মৃত্যু জন্ম দিয়েছে হাজারো প্রশ্নের
আরও পড়ুন- ভয়াবহ কোন সংক্রামক ভাইরাস সম্পর্কে বারবার সতর্ক করেছিলেন বিল গেটস
আরও পড়ুন- ঘরবন্দি দিনও কাটুক আনন্দে
আরও পড়ুন- চীন যেভাবে করোনাভাইরাস জয়ের পথে
আরও পড়ুন- চীন থেকে কেন নতুন সব ভাইরাস ছড়ায়
আরও পড়ুন- সিনেমায় ভাইরাস