করোনা ঠেকাতে করণীয়1 min read
Reading Time: 3 minutesইতিমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসকে বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে উল্লেখ করেছে। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৭৫টি দেশে ছড়িয়ে পরেছে এই ভাইরাস। আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লাখের বেশি মানুষ, মৃতের সংখ্যা অতিক্রম করেছে ২৪ হাজারের সীমা। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে যেন এই সংখ্যা। প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এই ভাইরাসে।
প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ না দিলে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ছড়ানোর প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানাচ্ছেন দেশ বিদেশের বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশে ২৭ মার্চ পর্যন্ত ৪৮ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। আর মারা গেছে ৫ জন। ঘনবসতিপূর্ণ এ দেশে ছোঁয়াচে এই ভাইরাস একবার বড় আকারে ছড়িয়ে পড়লে যে বিশাল সংখ্যক মানুষকে ভোগাবে সে কথা সহজেই অনুমেয়।
এমতাবস্থায় ঝুকিপূর্ণ সময়ে আপনাকে ভাইরাসের প্রকোপ থেকে বাঁচতে নিম্নোক্ত দিকগুলো মেনে চলতে হবে।
- যতটা সম্ভব ঘরে থাকুন
- যথাসম্ভব হাত সাবান দিয়ে পরিষ্কার রাখুন।
- চারিদিকে খোজ রাখুন, সতর্ক থাকুন।
- বাচ্চাদের নিয়ে সদা সতর্ক ও স্বাভাবিক থাকুন।
- অযথা মাস্ক মজুদ করবেন না।
- প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য, ঔষধ ইত্যাদি মজুদ রাখুন।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে বেশি ঝুকিতে আছেন বিশেষত বয়স্করা। কঠিন এ সময়টায় যতটা সম্ভব নিজের ও আশপাশের মানুষের খেয়াল রাখাই আপাত জরুরী এবং প্রধান কাজ। এজন্য কিছু বিষয় অতি অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে।করোনার ক্ষেত্রে সবচাইতে বড় বিষয় আতঙ্কিত হওয়া যাবেনা। ঠান্ডা মাথায় কিছু নিয়মনীতি মেনে আপনি আপনার আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি যেমন কমাতে পারবেন তেমনি আপনার পরিবার ও অন্যদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবেন।
এ জন্য যা যা করতে হবে তা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি-
যথা সম্ভব ঘরে থাকুন
করোনাভাইরাস বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে না। এটি সংক্রমণ ঘটায়। অর্থাৎ আক্রান্ত ব্যক্তির হাচি, কাশির সংস্পর্শের মাধ্যমে করোনা ছড়াতে পারে। করোনাভাইরাস মানবদেশে কোন লক্ষণ প্রকাশ না করে ২১ দিন সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। আক্রান্ত কেউ সুস্থ বোধ করা মানেই যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন ব্যাপারটি তেমন নয়।
তাই আপনার শরীরে কোনো রোগ বাসা বেধে না থাকলেও বাড়তি সতর্কতা হিসেবে মানুষের সংস্পর্শে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন। মনে রাখবেন এ সময় দূরত্ব বজায় রাখা মানেই অপরকে ভাল রাখা। যতটা সম্ভব লোকসমাগম এড়িয়ে নিজেকে আলাদা রাখুন। এতে আপনার করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি বহুলাংশে কমে যাবে।
অপেক্ষাকৃতভাবে তরুণদের করোনাভাইরাসের ঝুকি অনেকখানি কম। কিন্তু তাই বলে সাহস দেখিয়ে বেড়িয়ে নিজেকে আক্রান্ত করে পরিবারের অন্যদের ঝুকির মধ্যে ফেলে দেওয়ার মানে হয়না। তাই ঘরে থাকুন। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বের হওয়ার দরকার নেই।
সাবান দিয়ে বারবার হাত পরিষ্কার করুন
হাত পরিষ্কার রাখুন। এর বিকল্প নেই।
প্রথমত হাত ধুয়ে নিন। এরপর সাবান দিয়ে হাত ঘষে ঘষে ভালোমত পরিষ্কার করুন। আঙুলের গোড়ায়,নখের কোণা ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ঘষে পরিষ্কার করুন।( ২০ সেকেন্ড হিসেব করতে হ্যাপি বার্থডে টু ইউ দুইবার সুরে সুরে গাইতে গাইতে পরিষ্কার করতে পারেন। )
এরপর হাত শুকিয়ে নিন। এছাড়া যথাসম্ভব অপরিষ্কার হাতে চোখ,নাক ,মুখে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে পারেন। এটিও বেশ কাজের। অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাতে ঘষে নিলেই চিন্তামুক্ত। তবে সেক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে স্যানিটাইজারে যেন অন্তত ৬০ শতাংশ এলকোহল থাকে।
করোনা ভাইরাস অন্যান্য ভাইরাসের তুলনায় ভারী। এটি বাতাসে না ছড়িয়ে যেকোনো তলে লেগে থাকতে পারে । তাই সহজে একে প্রতিরোধ করার উপায় হল হাতের কাছের ব্যবহৃত বস্তুকে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা।
প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাপল বলছে, যেসব জিনিস বেশি ব্যবহৃত হয় যেমন আপনার ফোন, ল্যাপটপ, ট্যাব ইত্যাদি জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার রাখুন। সেক্ষেত্রে ৭০ ভাগ আইসো প্রোপাইল এলকোহল আছে এমন জীবাণুনাশক দিয়ে সেসব পরিষ্কার করুন।
আর যেকোনো তলকে জীবাণুমুক্ত করতে গ্লাভস ব্যবহার আপনাকে জীবাণু থেকে সুরক্ষা দেবে। সেক্ষেত্রে ব্যবহার শেষে গ্লাভস সাবান দিয়ে ধুয়ে নিলেই তা পুনঃব্যবহার যোগ্য হবে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো হাচি, কাশি দেয়ার সময় কনুই দিয়ে মুখ- নাক ঢেকে নিন।
সবসময় খোজখবর রাখুন
করোনাভাইরাসের এই সময়ে নানা গুজব আর বিভ্রান্তিকর খবর আপনার চারপাশে ছড়াচ্ছে বা ছড়ানোর সম্ভাবনা বেড়ে গেছে। গুজব আপনার পরিবারকে আতঙ্কিত করে ফেলতে পারে। তাই সঠিক তথ্য জেনে নিজে ও নিজ পরিবার পরিজনকে শারীরিক ও মানসিক দুভাবেই সুস্থ রাখাই এ সময়ের প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব। করোনা সম্পর্কে জানে এমন ডাক্তার, স্বাস্থ্য কর্মকর্তার মতামতকে গুরুত্ব দিন। ভুঁইফোঁড় সংবাদমাধ্যম থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
বাচ্চাদের নিয়ে ঠান্ডা মাথায় সতর্ক থাকুন
এই সময়টায় মা-বাবাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন বাচ্চাদের বিশেষত যাদের বয়স দশ বছরের নিচে তাদের করোনা ভাইরাসের ঝুকি প্রায় নেই বললেই চলে।
নিজেরা সদা সতর্ক থেকে বাচ্চাদের নিয়ে ভাল থাকার চেষ্টা করুন। শিশুদের মহামারি সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে ধারণা দিন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার বিষয়টি তাদের বুঝিয়ে বলুন।
বাসায় থাকাকালীন তাদের বাসায় খেলতে উৎসাহ দিন, ভাল সিনেমা দেখান। স্কুল ছুটির এই সময়টায় তাদের মন যাতে ভারাক্রান্ত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
অযথা মাস্ক কিনে ঘর ভরিয়ে ফেলবেন না
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে সার্জিক্যাল মাস্ক রোগ জীবাণু আটকাতে তেমন কাজে দিচ্ছেনা। (মাস্ক কেবল আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে জীবাণু না ছড়াতেই কার্যকর )
তাই অযথা মাস্ক কিনে বাজারে সংকট তৈরি করা থেকে বিরত থাকুন।
মজুদ রাখুন প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য,ঔষধ আর অন্যান্য প্রইয়োজনীয় জিনিস
অন্তত এক মাসের গৃহস্থালীর প্রয়োজনীয় খাবার সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে রাখুন। ঘরে প্রয়োজনীয় ঔষধ ,সাধারণ জ্বর,কাশির জন্য কাজ করে এমন ঔষধ না থাকলে নিকটস্থ ফার্মেসি থেকে কিনে আনুন।