এলিয়েন আছে, এলিয়েন নেই!1 min read
Reading Time: 3 minutesঅপরিচিত বা ভিনদেশী কোন কিছুকেই সাধারনতা এলিয়েন বলা হয়। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের সীমা রেখার বাইরে থেকে আগত কোন নাগরিককে সে দেশের ইমিগ্রেশন দপ্তর ‘এলিয়েন এন্ট্রি’ হিসেবেই গণনা করে। কিন্ত ব্যাপক অর্থে এলিয়েন বলতে, আমরা বুঝি ভিনগ্রহের কোন প্রানী।যেহেতু মানুষের কল্পনাশক্তির একটি সীমা আছে তাই ঐসব ভিনগ্রহের প্রানীদের চেহারা কেমন হবে সেটা নিয়ে খুব বেশিদুর গবেষনা এগোয়নি। তাই মানুষ তাদের আকৃতির অথচ বেশ বিকৃতা কিছু চেহারা, যাদের মুখের তুলনায় চোখ দুটি বড় এবং মুখমন্ডলি অমশৃন এবং বিকৃত-এমন কল্পনার চেহারা বানিয়ে তাদেরকে এলিয়েন হিসেবে চিত্রায়িত করে।
এই এলিয়েন গোষ্টী আছে কি নেই, সেটা নিয়ে রুপকথা এবং বিজ্ঞান কল্পকথার অনেক বিষয়-ই্ বেশ আলোচিত। সম্প্রতি বিষয়টি আবার নতুন করে আলোচনায় এসেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের তরফে চালিত একটি এলিয়েন খোজার গবেষনা কর্মকান্ড-সংবাদ মাধ্যমে আসার কারনে।
ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে বিবিসি এবং নিউইয়র্ক টাইমস খবর ছেপেছে, যে ২০১২ থেকে ২০১৭ এই ৫ বছরে পেন্টাগন একটি গোপন গবেষনা কর্ম চালিয়েছে ২২ মিলিয়ন ডলার খরচ করে। যদিও এই প্রকল্প বন্ধ হয়েছে ইতিমধ্যে, এবং সমালোচনাকারীদের তরফে ঐ ফান্ডে টাকা বরাদ্দ দেয়ার কারনে সাবেক সিনেটর হ্যারি রেইড এর বিরুদ্ধে গালাগাল করেই যাচ্ছেন।তবে হ্যারি রেইড বলছেন, ‘আমি তো ভুল কোন প্রকল্পকে সমর্থন দেইনি, যেই প্রকল্পে টাকা ব্যায় হয়েছে, সেটা জানার ব্যাপক কৌতুহল আছে মানুষের, কেননা, একাধিক প্রমান আমরা পেয়েছি যে, ভিনগ্রহের হয়তো কেউ আমাদেরকে নজরদারীতে রেখেছে। এমন কিছু হলে, এবং তাদের সম্পর্কে জানা গেলে, নিশ্চই সেটার নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রই এগিয়ে থাকবে, সেটাই চেয়েছি আমি’।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, হ্যারি রেইড এর দাবী একেবারে অমূলক নয়। ২০১৭ সালে সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রে এফ ১৮ বিমান যেটা শব্দের চেয়েও অন্তত ৩ গুন বেশি গতিতে চলে, সেটার পাইলট দুর থেকে একটি উড়ে যাওয়া বস্তুর ছবি ধারন করেন। প্রায় ২ মিনিট যাবৎ সেটি উড়তে থাকে, এবং কয়েকবার ঘূর্নিয়মান অবস্থায়ও তার চেহারা দেখা যায়। বৈমানিক চিৎকার করে বরছিলেন, এমন কিছু আমার জীবনে দেখিনি আমি। সেটা সর্বশেষ উদাহারণ। তবে এর আগে বিশ্বের অনেক জায়গায় গোলাকৃতির এমন ভিন্ন আকৃতির উড়ন্ত বস্তুর দেখা মিলেছে বলে অনেকেই বলেন। আর অশরীরি বা সুপার ন্যাচারল বলে কিছু প্রানী বা মানুষআকৃতির অনেক কিছুর দেখা মিলেছে বহুবার। এ থেকেই মূলত ধারনা তৈরী যে ভিনগ্রহের কিছু না কিছু মানুষকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে, বা মানুষ সম্পর্কে জানতে চায়।
এই সুত্র ধরেই এই আলোচনার প্রেক্ষাপট, যে আসলেই এলিয়েন বা ভিনগ্রহের কোন প্রানীর অস্তিত্ব আছে, নাকি নেই। সেটির বিষয়ে নানান গবেষনা আর লেখালেখির অনুসন্ধান করতে গিয়ে, বেশ অবাক করা কিছু সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে জানা গেল। যার প্রায় সব গুলোই প্রাচীন মহাকাশ বিদ্যার প্রেক্ষিতে আজকের মহাকাশে স্থাপিত যুক্তরাষ্ট্রের টেলিস্কোপ যন্ত্র হ্যাবলস এর পাঠানো ছবির বিশ্লেষন।
১৯৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড হ্যাবলস এর নামানুসারে একটি স্পেস পর্যবেক্ষন যন্ত্র প্রেরণ করে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষনা দপ্তর নাসা। সেটি,এখন পৃথিবী থেকে এমন দুরত্বে আছে, যেখানে সে প্রতি ৯৭ মিনিটে একবার পৃথিবীর চার পাশ ঘুরে আসে। অনবরত এবং বিরতিহীন ভাবে সে ১৯৯০ সাল থেকে পৃথিবী আর দুর আকাশের ছবি তুলে যাচ্ছে, যার মাধ্যমেই মুলত আমরা হালের প্রকৃতির সব তথ্য এবং ছবি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।তার সর্বশেষ সাফল্য, প্রায় হারিয়ে যাওয়া গ্রহ প্লুটোর স্পষ্ট ছবি তুলে পাঠানো। এর বাইরে সম্ভবত ১৯৯৫ সালে তাকে একবার মহাকাশ এর ডিপ ফিল্ড এর ছবি তোলার নিদের্শনা পাঠানো হয়েছিল। সেই ছবি এ যাবৎকালের মহাকাশ নিয়ে জ্ঞান গবেষনার নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
হাবলস এর পাঠানো ছবি’র প্রেক্ষাপর্ট বিশ্লেষন করে নাসার বিজ্ঞানীরা এই তথ্য দিয়েছেন, যে আসলে আমাদের পৃথিবী চলতি ইউনিভার্স বা বিশ্বব্রমান্ডে একটি ক্ষুদ্র বালুকনার সমান।আর সুর্য সেটি আরো একটু মোটা দানা’র মত বালু কনার সমান। আমাদের সুর্যকে কেন্দ্র করে যে ৯টি গ্রহ এবং তাদের উপগ্রহ আছে, সেটিকে বলে একটি সোলার সিস্টেম। এমন, কয়েক কোটি সোলার সিস্টেম সচল আছে আমাদের পৃথিবীর অবস্থান যেই গ্যালাক্সীতে, সেখানেই। হাবলস এর ছবি বিশ্লেষন করলে দেখা যায়, সেখানেই তো সব শেষ নয়, এমন গ্যালাক্সীর সংখ্যা ১২০ বিলিয়ন। সুতরাং সহজ হিসেবটা এমন; আমাদের পৃথিবী আর সুর্যের যে সোলার সিস্টেম, সেই সিস্টেম কয়েক কোটি আছে একটি গ্যালাক্সীতে, যেটাকে আমরা মিল্কিওয়ে নামেও চিনি। এমন মিল্কিওয়ের সংখ্যা ১২০ বিলিয়ন।
এই ১২০ বিলিয়ন মিল্কিওয়ের যত গ্রহ এবং উপগ্রহ আচে, তার পরিমান পৃথিবীর জমাকৃত মোট বালুকনার চেয়েও বেশি হবে বলে ধারনা বিজ্ঞানীদের। তাদের মধ্যেই কোন এক বালুকনা হলো আমাদের পৃথিবী। সুর্য একটু বড় মোটা দানা, কিন্ত তার চেয়েও হাজারো, লক্ষ মোটা দানায় ভরপুর আমাদের ইউনিভার্স। আরো ভয়ের কথা হলো, অন্ধকারে যেই তারা ঝলমলে আকাশ আমরা দেখি, তার প্রতিটি তারা কোন কোনটি, সুর্যের ১০ থেকে ১০০ গুন বড় গ্রহও। এদের কোনটিতে কোন প্রানী আছে তা কে জানে?
বিশ্বাস হচ্ছে না? একটু ভাল করে কালো রাত্রিতে তারা গুলো দেখবেন। ওরা কিন্তু আমাদের আকাশের নয়। ওরা দুরের। এমন দুরের, যে আলোকবর্ষের যে গতি, প্রতি সেকেন্ডে ৩ লক্ষ মাইল, সেই আলোকর্ষের গতিতে গেলেও, সবচে কাছের অর্থাৎ সুর্য কেন্দ্রিক সোলার সিস্টেম এর বাইরেরর সিস্টেম এর একটিতে তারা’তে পৌছাতে ১ বিলিয়ন বছর লেগে যেতে পারে।আর দুরের গুলোর অনেকটির হিসেব এখনও বের করা যায়নি। তবে এটা বলা হয়, পৃথিবীর আর সুর্য সহ আমাদের সোলার সিস্টেম এর অবস্থান যে মিল্কীওয়ে তে, তার এপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে আলোকবর্ষের গতিতে ছুটলেও, লেগে যাবে ১০০ বিলিয়ন বছর।আমরা তো সবে মাত্র হিসেব করছি দু’হাজার বছরের কিছু বেশি, যা আলোক বর্ষের হিসেবে কয়েক সেকেন্ড হয়তো!
সুতরাং এত সব বালুকনারাশির মত গ্রহ উপগ্রহের মধ্যে থেকে অন্য কোন কোথাও কেউ যে নেই সেটা কে বলবে? আমরাও যে আছি সেটাও নিশ্চই তাদের বলার কেউ নেই। একটু আধটু জানাশোনা হলে ক্ষতি-ই বা কি!