১৯৮৮ সালের তিন জুলাই পারস্য উপসাগরে আমেরিকান যুদ্ধ জাহাজ ইউএসএস ভিনসেন্স থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রে বিধ্বস্ত হয় দুবাইগামী ইরানি একটি যাত্রীবাহী বিমান। এতে নিহত হয় ৬৬ জন শিশুসহ ২৯০ জন যাত্রীর সবাই।
ইরাকের সাথে যুদ্ধ চলাকালীন সেসময়ে ইরান ছোট ছোট স্পিডবোট ব্যবহার করা রকেটচালিত গ্রেনেডধারী বিপ্লবী গার্ডদের মাধ্যমে পারস্য উপসাগরে শত্রুপক্ষের তেলবাহী জাহাজে আক্রমণ করতো। অনেকগুলো স্পিডবোট তেলবাহী জাহাজকে ঘিরে ফেলে সেগুলো ধ্বংস করতো।
১৯৮৭ সালে ইরাক ইউএসএস স্টার্ক নামক এক মার্কিন যুদ্ধ জাহাজে মিসাইল হামলা চালানোর পর থেকে পারস্য উপসাগরে যুক্তরাষ্ট্র শক্ত অবস্থান নেয়। যুক্তরাষ্ট্রে তেল প্রবাহ ঠিক রাখতে কুয়েত থেকে আসা তেলবাহী ট্যাংকারগুলোকে নিরাপত্তা দিতে মার্কিন নেভি পারস্য উপসাগরে টহল দিত সেসময়।
১৯৮৮ সালের জুলাই ৩ তারিখে এক মার্কিন জাহাজ ইরানি বিপ্লবীদের দ্বারা আক্রান্ত হলে আমারিকার শক্তশালী যুদ্ধজাহাজ ভিনসেন্স সাহায্যের জন্য এগিয়ে যায়। এই মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ ইরানি বিপ্লবীদের স্পিডবোটগুলো ধ্বংস করে আক্রমণের পরবর্তী লক্ষ্যের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। এমন অবস্থায় ইরানের বন্দর আব্বাস এয়ারপোর্ট থেকে এয়ারবাস-এ ৩০০ মডেলের একটি উড়োজাহাজটি পারস্য উপসাগরে আসলে সেটিকে ইরানি বিমান বাহিনীর যুদ্ধ বিমান এফ-১৪ টমক্যাট ভেবে ইউএসএস ভিনসেন্সের ক্যাপ্টেন উইলিয়াম সি. রোজার্সের তার ক্রুদের ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার নির্দেশ দেন। এতে আকাশেই বিধ্বস্ত হয় উড়োজাহাজটি।
যুক্তরাষ্ট্রের সেসময়ের প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান তাৎক্ষণিকভাবে ইরান সরকারের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে চিঠি পাঠালেও পেন্টাগন থেকে ইরানের ওপরই দোষ চাপানোর চেস্টা করা হয়। তারা আত্মপক্ষ সমর্থনে দাবি করে, তাদের যুদ্ধ জাহাজ ইউএসএস ভিনসেন্সের কমান্ডারদের সেই উড়োজাহাজটিকে বিপদজনক মনে করার অনেক কারণ ছিল এবং তারা আত্মরক্ষার জন্যই ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে। তারা আরও দাবি করে, ইরানের সেই বিমানটি উচ্চ গতিতে ভিনসেন্সের দিকে মোড় নেয়, সেটি দিক পরিবর্তন না করে নিচের দিকে নেমে আসছিল, যোগাযোগ করছিল না, সব মিলিয়ে যুক্তিসঙ্গত কারণেই এটিকে তাদের কাছে বিপদজনক বলে মনে হয়েছে।
কিন্তু পরবর্তীতে মার্কিন নেভির তদন্তকারীদের ফাঁস হওয়া প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইরানের সেই উড়োজাহাজটি যুদ্ধ বিমানের চেয়ে অনেক ধীর গতিতে উড়ছিল এবং সেটি আক্রমণ করতে নিচে না নেমে বরং আরও ওপরের দিকে উঠছিল।