ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস হয়নি – বলছে পেন্টাগন ; প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান ট্রাম্পের1 min read
Reading Time: 2 minutesযুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস হয়নি, বরং তা মাত্র কয়েক মাস পিছিয়ে গেছে বলে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার একটি প্রাথমিক মূল্যায়নে উঠে এসেছে। এমন সময় এই তথ্য জানা গেল, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে এক অনিশ্চিত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে ট্রাম্প ঘোষণা দেওয়ার পর উভয় দেশই যুদ্ধবিরতির প্রতি সম্মতি জানায়। এর আগে ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর তারা বেসামরিক বিধিনিষেধ তুলে নেয়। এ যুদ্ধ চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনায় হামলা চালায়।
ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের বোমা ব্যবহার করে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘ধ্বংস’ করে দিয়েছে। কিন্তু তার প্রশাসনের এক গোয়েন্দা সংস্থার প্রাথমিক মূল্যায়নে দেখা যাচ্ছে, বাস্তবে পরিস্থিতি তার চেয়ে ভিন্ন।
এ বিষয়ে অবগত তিনটি সূত্র জানায়, ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি এবং দেশের অধিকাংশ পারমাণবিক স্থাপনা যেহেতু মাটির নিচে অবস্থিত, সেগুলো মাত্র এক থেকে দুই মাস পিছিয়ে গেছে।
প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা (ডিআইএ) তৈরি করা এক প্রতিবেদনের বরাতে জানা গেছে, হামলায় দুইটি স্থাপনার প্রবেশপথ বন্ধ হলেও মাটির নিচে থাকা ভবনগুলো ধসে পড়েনি। ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, ওই হামলায় কিছু সেন্ট্রিফিউজ এখনও অক্ষত রয়ে গেছে।
হোয়াইট হাউস অবশ্য এই মূল্যায়নকে ‘পুরোপুরি ভুল’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তারা ‘দুর্বল’ করে দিয়েছে, যদিও ট্রাম্প আগেই বলেছিলেন সেটি ‘সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস’ করা হয়েছে।
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে অভিযানে পারমাণবিক ধ্বংসের আশঙ্কা দূর হয়েছে এবং তেহরান নতুন করে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করা হবে।
‘আমরা আমাদের দুইটি অস্তিত্বগত হুমকি দূর করেছি—একটি পারমাণবিক ধ্বংসের আশঙ্কা, অপরটি ২০ হাজার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ভয়’, বলেন নেতানিয়াহু।
অন্যদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান দাবি করেছেন, তার দেশ ‘বিপুল বিজয়’ অর্জন করে যুদ্ধ শেষ করেছে। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনা জানিয়েছে, তিনি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে বলেছেন, তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মতপার্থক্য নিরসনে প্রস্তুত।
গোয়েন্দাদের দাবিকে ‘ভুয়া’ বললেন ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের ইরান হামলা নিয়ে ফাঁস হওয়া গোয়েন্দা তথ্যকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ আখ্যা দিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের কর্মকর্তারা। মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেছেন, এই তথ্য ফাঁস ‘অবিশ্বাস্য রকমের অপরাধ’ এবং এর জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা উচিত।
ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উইটকফ বলেন, ‘এটা রাষ্ট্রদ্রোহ। এর তদন্ত হওয়া উচিত। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের জবাবদিহি করতে হবে।’
তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ক্ষয়ক্ষতির সব প্রতিবেদন তিনি পড়েছেন এবং তার দাবি, যেসব তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা হয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে।
ফোরদোর মতো গোপন স্থাপনাতেও বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে দাবি করে উইটকফ বলেন, ‘আমরা সেখানে ১২টি ব্যাংকার বাস্টার বোমা ফেলেছি। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। কেউ যদি বলে, আমাদের লক্ষ্য পূরণ হয়নি—তাহলে সেটা পুরোপুরি হাস্যকর।’
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেও উইটকফের বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ পোস্ট করেছেন। তিনি উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন, ‘ফোরদোতে ১২টি ব্যাংকার বাস্টার ফেলা হয়েছে। ছাদ ভেদ করে ভেতর ঢুকেছে এবং পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। কেউ যদি বলে, আমরা সফল হইনি—তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
এর আগেও ফাঁস হওয়া গোয়েন্দা মূল্যায়নে বলা হয়েছিল, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো হয়তো পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি, কেবল কিছুটা সময় পিছিয়ে গেছে। তবে ট্রাম্প এই প্রতিবেদনকে ‘ভুয়া’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
ট্রুথ সোশ্যাল-এ আরও একটি পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘ভুয়া নিউজ সিএনএন এবং ব্যর্থ নিউইয়র্ক টাইমস মিলে ইতিহাসের অন্যতম সফল এই সামরিক অভিযানের গুরুত্ব খাটো করার চেষ্টা করছে। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে! টাইমস ও সিএনএন—দুটোই এখন জনরোষে পড়েছে।’