মানব ইতিহাসের ৫ কুখ্যাত গণহত্যা1 min read
Reading Time: 4 minutesগণহত্যা শব্দটির সঙ্গে আমরা প্রায় সবাই পরিচিত। গণহত্যা শব্দটি ইংরেজি (Genocide) জেনোসাইড শব্দটির প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কোনো একটি নির্দিষ্ট ভৌগলিক এলাকায়, একটি নির্দিষ্ট সময়ে অধিক সংখ্যক মানুষকে হত্যা করার ঘটনাকে বুঝাতে গণহত্যা শব্দটি ব্যবহার করা হয়। পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে অসংখ্য গণহত্যার ঘটনা আমাদের সামনে চলে আসে। সাধারণত শাসকশ্রেণী দ্বারা এসব হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছে। কিছু কিছু গণহত্যা এতটাই ভয়ঙ্কর ও বিভীষিকাময় ছিলো যে, ঐ সব গণহত্যার ইতিহাস কিংবা বিবরণ শুনলে যেকোনো মানুষই শিহরিত হয়ে উঠবে।
আজকে আমরা এমন ৫ টি বর্বর গণহত্যা সম্পর্কে আলোচনা করবো-
১. ২৫শে মার্চের ভয়াল কালো রাত্রি
পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী তাদের নীলনকশা প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে নিরীহ ও নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের উপর যে বর্বর ও বিভৎস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, তা ইতিহাসে ২৫ মার্চের কালোরাত্রি হিসেবে সবার কাছেই পরিচিত হয়ে আছে। এই গণহত্যা চালানোর বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই গোপনে তারা প্রস্তুতি নেয়। তাদের উদ্দেশ্যই ছিলো বাঙালি জাতীয়তাবাদকে মূলেই ধ্বংস করে দেওয়া। আর এই উদ্দেশ্য নিয়েই ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে, রাত ১১ টা বা সাড়ে এগারোটা নাগাদ পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা বাঙালি নিরস্ত্র জনগণের ওপর আক্রমণ করতে রাস্তায় বেরিয়ে আসে।
তারা ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুমন্ত বাঙালির উপর আক্রমণ চালায়। তাদের এই আক্রমণ অপারেশন সার্চলাইট নামে পরিচিত। ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ ও বাঙালি রিকশাচালকও তাদের এই আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়নি। মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইন এই রাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, সেই রাতে সাত হাজার মানুষকে হত্যা করা হয় এবং তিন হাজারেরও অধিক মানুষকে গ্রেফতার করা হয়। ঢাকাতে এই হত্যাকান্ড শুরু হলেও তা পরবর্তীতে ছড়িয়ে পড়ে দেশব্যাপী; শুরু হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ।
২. আর্মেনীয় গণহত্যা
উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে রুশ ও তুর্কি অটোম্যান শাসকগোষ্ঠীর অধীনে বাস করতো আর্মেনীয় জাতি। অটোম্যান সাম্রাজ্যের পূর্বাঞ্চলের প্রদেশগুলোতে প্রায় ১৭ থেকে ২৩ লাখ আর্মেনীয়দের বসবাস ছিল। অটোম্যান সাম্রাজ্যের শাসকেরা এই আর্মেনীয়দের সন্দেহের চোখে দেখতো এবং নিজেদের শত্রু মনে করতো। তুর্কি অটোমান সাম্রাজ্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি ও অস্ট্রিয়া- হাঙ্গেরির পক্ষ গ্রহণ করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ২৪ এপ্রিল ১৯১৫ সালে আর্মেনীয়দের কয়েক‘শ নেতা ও বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে তুরস্কের বর্তমানের ইস্তাম্বুলে বন্দি করে। পরবর্তীতে তাদের বেশিরভাগকে হত্যা করে এবং কিছু সংখ্যক মানুষকে মরুভূমিতে নির্বাসিত করে। ২৪ই এপ্রিল আর্মেনীয়রা গনহত্যা দিবস পালন করে থাকে।
অটোম্যান সাম্রাজ্যের শাসকেরা আর্মেনীয়দের উপরে বীভৎস হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করে। বিষ প্রয়োগ, পানিতে ডোবানো, উত্তপ্ত মরুভূমিতে হাঁটানো, আগুনে পোড়ানো, গুলি করা এমন সব উপায়ে আর্মেনিয়ার মানুষদের হত্যা করে। এমনই সব নরকীয় হত্যাকাণ্ডের পর গণহত্যা শেষ হলে আর্মেনীয়দের সংখ্যা নেমে আসে মাত্র তিন লক্ষ ৮৮ হাজারে। আর্মেনীয়রা দাবি করে, তাদের ১৫ লাখ মানুষকে এই গণহত্যায় মেরে ফেলা হয়েছিল। এই গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মৌখিকভাবে আর্মেনীয়রা পেলেও এর ক্ষতিপূরণ এখনো পায়নি। আর অটোম্যান সাম্রাজ্য অর্থাৎ বর্তমান তুরস্কও এটিকে গণহত্যা হিসেবে মেনে নিতে নারাজ।
৩. বসনিয়া গণহত্যা
১৯৯২ সালের এপ্রিল মাসে বসনিয়া হার্জেগোভিনর সরকার যুগোস্লাভিয়া প্রজাতন্ত্র থেকে নিজেদেরকে স্বাধীন হওয়ার ঘোষণা প্রদান করে। এই স্বাধীনতা ঘোষণার অপরাধে বসনিয়ান মুসলিম ও ক্রোয়েশীয় নাগরিকদের ওপর সার্বরা নরকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। সার্বরা ছিল যুগোস্লাভিয়া প্রজাতন্ত্রের মদদপুষ্ট সেনাবাহিনী। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত চলা প্রায় তিন বছরের এই হত্যাযজ্ঞে সার্বরা কমপক্ষে ১ লক্ষ মানুষকে হত্যা করে। এদের মধ্যে ৮০% ছিলো বসনিয়ান মুসলিম। নারীদের ধর্ষণ ও নির্যাতন করে মেরে ফেলত। তাদের এই অমানুষিক হত্যাযজ্ঞই ইতিহাসে বসনিয়া গণহত্যা নামে পরিচিত।
৪. হলোকাস্ট গণহত্যা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চলা এই হলোকাস্ট গণহত্যাটি ইতিহাসে বেশ নেতিবাচকভাবে প্রসিদ্ধ হয়ে আছে। হলোকাস্ট শব্দটির বাংলা হলো সবকিছু পু্ড়িয়ে ফেলা। তবে এটি দ্বারা মূলত হিটলারের নাৎসি বাহিনী কর্তৃক ৬০ লাখ মানুষকে হত্যা করার ঘটনাকেই বোঝানো হয়ে থাকে। হিটলারের নাৎসী বাহিনী ইউরোপ মহাদেশ থেকে ইহুদীদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। তারপর থেকেই ইহুদীদের উপর নির্মম নির্যাতন শুরু হয়। গুলি করে, অনাহারে রেখে, আবার অতিরিক্ত কাজে বোঝা চাপিয়ে কিংবা কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে মানুষদের নির্মমভাবে হত্যা করতো নাৎসি বাহিনী।
১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত চলা এই হত্যাযজ্ঞে কী পরিমান মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল তা নিয়ে মতভেদও রয়েছে। কোনো কোনো তথ্যমতে, ১১ মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। আবার কোনো উৎস থেকে পাওয়া যায়, এক কোটি ৭০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিলো এই নৃশংস গণহত্যায়।
৫. হিরোশিমা ও নাগাসাকি গণহত্যা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে ১৯৪৫ সালের আগস্ট মাসে আমেরিকা কর্তৃক হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে দুটি পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ৬ই আগস্ট হিরোশিমায় লিটল বয় নামক পারমানবিক বোমা বর্ষণ করে। এই বোমার আঘাতে প্রায় ২ লক্ষ মানুষ মারা যায়। এমন হত্যাযজ্ঞের রেশ কাটতে না কাটতেই ৯ ই আগস্ট নাগাসাকিতে ফেলা হয় ফ্যাট ম্যান আরেকটি পারমানবিক বোমা। আর এই বোমার বিস্ফোরণে প্রাণ হারায় ৭০ হাজারেরও অধিক মানুষ। এই দুই বোমার আঘাতে দুটি শহর পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। মানুষ থেকে শুরু করে সব প্রানীই যে যে অবস্থাতে ছিলো, সেই অবস্থায়ই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এই বোমার নেতিবাচক প্রভাব এখনো এই দুই শহরের অধিবাসীদের বয়ে বেড়াতে হয়। এমন ভয়ঙ্কর গণহত্যার শিকার হয়ে জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়।
সাধারণত শাসক গোষ্ঠী তাদের নিজেদের স্বার্থে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসব হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করে। এইসব গণহত্যাগুলো মানব ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। ভবিষ্যতে এমন গণহত্যার ঘটনা আর না ঘটুক, এমনটি সবার প্রত্যাশা।
Alhajjfazlur
এই আর্টিকেল লেখার আগেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন তুরস্কে যে আর্মেনিয়ান হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় তার ব্যাকগ্রাউন্ড জানার দরকার ছিল। ঘটনার বাস্তবতা মূলত ছিল তুর্কি অটোম্যান সাম্রাজ্যের পতন ঘটানো। ুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুু এ সংক্রান্ত কিছু লিন্ক আমার কাছে আছে। ব্রিটিশরা হাজার বছর আগেই মুসলিম সমাজের পতনের ছক একেছিল। আট বার তারা ক্রুসেড করেছে। তুর্কি সেনাবাহিনীর জন্মগত সিনিয়র খ্রিষ্টান জেনারেল কামাল পাশা ছিল ব্রিটিশের গোপন এজেন্ট। কোন সম্রাজ্য এখনো এতো আহাম্মক হয়নি যে বিশ্ব যুদ্ধে যোগদান নিজ দেশে গণহত্যা চালানোর মত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে নিজেদের শক্তি দুর্বল করে। কামাল পাশার মাধ্যমে অটোম্যান সাম্রাজ্য পতনের লক্ষ্যে আলোচিত গণহত্যার প্লট তৈরি করা হয়েছিল, যাতে অটোম্যান সাম্রাজ্য দুর্বল হলে জার্মানি ও তার মিত্রদের পরাজিত করা সহজ হয়। তার প্রমাণ মিলে অটোম্যানদের পতনের পর দায়িত্ব হস্তান্তরের দিনে ব্রিটিশ জেনারেলের এক কুচক্রী মন্তব্যে, তিনি সুস্পষ্টভাবে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন যে অটোম্যান সাম্রাজ্যের পতনে ব্রিটিশরা পুরোধা ছিল।ভালভাবে সবকিছুর উপর জ্ঞান অর্জন করুন ও তারপর লিখুন।