featured বিশ্ব

আরব বসন্তঃ এক ব্যর্থ বিপ্লবের কাহিনী1 min read

আগস্ট ৭, ২০২০ 5 min read

author:

আরব বসন্তঃ এক ব্যর্থ বিপ্লবের কাহিনী1 min read

Reading Time: 5 minutes

দুনিয়া জোড়া বড়সড় পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে বিপ্লবের হাত ধরেই। যেমন রেঁনেসা, শিল্প-বিপ্লব কিংবা বলশেভিক বিপ্লব। বিপ্লবের মূল উদ্দেশ্য কল্যাণ সাধন হলেও সব বিপ্লব কিংবা গণজাগরণে শেষমেষ তা প্রস্ফুটিত হয়নি। তেমনি এই প্রজন্মের চোখে দেখা এক বিপ্লব আরব বসন্ত। যে বিপ্লবের সময়ে একে একে স্বৈরশাসকদের পতন দেখছিল বিশ্ব। যে বিপ্লব নতুন কিছুর আশাই দেখিয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যের তরুণ আর সাধারণ মানুষদের। আরব বসন্ত গণতন্ত্রের সুবাতাস বইয়ে দিলেও কালক্রমে সে বীজ থেকে গড়ে ওঠা বৃক্ষের বেহাল দশা দেখলে আমরা এখন স্তব্ধ হই। যেন এ বিপ্লব হয়ে এসেছে বিষফোঁড়া হয়ে। এসবেরই আদ্যোপান্তই আজ জানাচ্ছি আপনাদের।

আরব বসন্ত মূলত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গণতন্ত্রের সূচনার গল্প। তিউনিসিয়া, সিরিয়া, মরক্কো, লিবিয়া, মিশর আর বাহরাইনে এই বিপ্লব ঘটেছিল। ২০১১ সালে সূত্রপাত ঘটা সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভীষণ প্রভাব ফেলা এই বিপ্লবের এত বছর পরেও রয়ে গেছে প্রভাব।

আরব বসন্ত আসলে কি?

আরব বসন্ত আদতে তিউনিসিয়া, মিশর এবং লিবিয়ায় স্বৈরশাসন অবসানের সূচনার আন্দোলন। সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা আর গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ছিল যে আন্দোলনের প্রধান লক্ষ। প্রযুক্তির উৎকর্ষে ফেসবুক আর টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দ্বারা এই আন্দোলনের উত্তেজনা গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ছড়াতে বেশি সময় নেয়নি।

বহু দেশ আরব বসন্ত থেকে উজ্জ্বীবিত হয়ে নিজেদের অপশাসন আর দুর্নীতির মোড়ক ভাঙতে তৎপর হয়েছিল। উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রেখেছিল এই আরব বসন্ত।

জেসমিন বিপ্লব

আরব বসন্তের সূত্রপাত ঘটে প্রায় এক দশক আগে ২০১০ এর ডিসেম্বরে। তিউনিসিয়ান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বুয়াজিজির আগুনে আত্মাহুতির মাধ্যমে জনমনে আক্রোশের সূচনা ঘটে। সেই সাথে তিউনিসিয়ায় জেসমিন বিপ্লবের সূত্রপাত ঘটে।

এটি ছিল তৎকালীন তিউনিসিয়ায় বিদ্যমান দুর্নীতি, অপশাসন, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বেকারত্বের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ। বুয়াজিজি ছিলেন একজন শিক্ষিত যুবক যে কিনা পড়াশোনা শেষ করে চাকরি না পেয়ে শুরু করে স্বল্প পুজির ক্ষুদ্র ব্যবসা। কিন্তু পুলিশের দুর্নীতি ও ঘুষের স্বীকার হয়ে তার ব্যবসা পণ্ড হয়ে যায়। এ দ্বার থেকে সে দ্বারে ঘুরেও বিচার না পেয়ে শেষ পর্যন্ত গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মাহুতি দেন তিনি। এ আগুন মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ে দেশব্যাপী। ফুঁসে উঠে সাধারণ মানুষ। উত্তাল হয়ে পড়ে তিউনিসিয়া।

রাতারাতি বন্ধ হয়ে যায় তিউনিসিয়ার রাস্তাঘাট এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেইন আল আবিদাইন বেন আলীর পতন ঘটে। স্বৈরশাসক হিসেবে যিনি ২০ বছর যাবত তিউনিসিয়াকে শাসন করে আসছিলেন।

গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারায় স্বৈরতন্ত্রকে রুখে দেওয়ার প্রয়াস হিসেবে প্রথমবারের মত দেশটিতে ২০১১ সালের অক্টোবরে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়। সমাজের একেবারে সাধারণ মানুষের সার্বিক অংশগ্রহণে এই সামাজিক আন্দোলনে রাজনৈতিক পরিবর্তনের সূচনা বিশ্বকে হতবাক করে দেয়। এরপর মিশরের কায়রোর তাহরির স্কয়ারের থেকে শুরু করে বাহরাইনেও একই অভ্যত্থান শুরু হয়।

যে কারণে এর নাম আরব বসন্ত

১৮৪৮ সালে ‘পিপল স্প্রিং’ নামটি থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে এসেছে আজকের আরব বসন্ত নামটি। ‘পিপল স্প্রিং’ ছিল মূলত ইউরোপেরই গণমানুষের রাজনৈতিক উত্থান ও সচেতনতার প্রতিচ্ছবি। এরপর বসন্ত শব্দটি মূলত গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা হিসেবেই  ব্যবহৃত হতে শুরু করে। যার ফলস্বরূপ চেকোস্লোভাকিয়ায় ১৯৬৮ সালের ‘প্রাগ বসন্ত’ আসে। ২০১১ সালে পশ্চিমা গণমাধ্যমের কল্যাণেই আরব বসন্ত শব্দের বহুল বিকাশ ঘটে।

আরব বসন্তের ফলাফল

তিউনিসিয়ায় বিপ্লবের উত্থানের ফলে গোটা আরব বিশ্বের গণমানুষের চিন্তা চেতনায় উন্মেষ ঘটার ফলে যে ব্যাপক পরিবর্তন আমরা দেখতে পেয়েছিলাম তা ছিল কেবলই সাময়িক।

বিশেষ করে মিশরে যখন পরিবর্তনের আবহাওয়া সর্বত্র, প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারককে যখন পদত্যাগে বাধ্য করা হল এবং গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচন করে ২০১২ তে মোহাম্মদ মুরসি ক্ষমতায় আসলেন তখনো মনে হচ্ছিল সব কিছু পরিবর্তনের পথে। কিন্তু সেনাপ্রধান আব্দেল ফাত্তাহ আল সিসি পরের বছর মুরসিকে হটিয়ে মিশরের প্রেসিডেন্ট হন। আজো অব্দি তিনিই ক্ষমতায় আছেন

মুয়াম্মার গাদ্দাফি

হোসনি মোবারকের মতো অতটা সহজে সরানো যায়নি ৩২ বছর যাবত লিবিয়াকে শাসন করা কর্ণেল মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে। রাষ্ট্রীয় বাহিনী দ্বারা আন্দোলনকারীদের দমনের চেষ্টা ছিল আগুনে ঘি ঢালার মতোই। গৃহযুদ্ধ বেঁধে যায় লিবিয়ায়। আট মাস ধরে চলা রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে ২০১১ সালে ক্ষমতা থেকে অপসারিত হতে বাধ্য হন গাদ্দাফি এবং পরিশেষে নিহত হন । ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ লোক তার মৃত্যু দৃশ্য দেখেছে।

গাদ্দাফির শাসনের অবসানের পর আবারো লিবিয়ায় শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। দেশটির রাজনৈতিক দুইপক্ষের সংঘাতের কবলে পড়ে প্রাণ হারায় নিরীহ জনগণ। দেশটির খাদ্য সম্পদ ও জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে পড়ে। দেশান্তরী হয় হাজারো মানুষ ,সৃষ্টি হয় শরণার্থী সংকট। নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে বেশিরভাগই ইউরোপ অভিমুখে যাত্রা শুরু করে।

বাশার আল আসাদ

আরব বসন্তের শেষ দিকে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ায় নিজ দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয় অনেক মানুষ। বেশিরভাগ শরণার্থী তুরষ্ক, গ্রীস ও পশ্চিম ইউরোপে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এরই মাঝে সন্ত্রাসী গ্রুপ আইসিস  উত্তর সিরিয়ার একাংশ দখল করে নিজেদের সাম্রাজ্যের ঘোষণা দিয়ে বসে। অন্যদের মতো বাশার আল আসাদের পতন হয়নি এবং তিনিও বিদ্রোহীদের এক প্রকার কঠোর হস্তে দমন করেন। বাশার আল আসাদ বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যেকার সংঘর্ষ আজো চলমান।

অন্যান্য

ইয়েমেনের স্বৈরাচারী শাসক আব্দুল্লাহ সালেহ এর পতন ঘটে আর ক্ষমতায় আসে আব্দুরাব্বে মানসুর। ইয়েমেনেও চলমান গৃহযুদ্ধ কিন্তু আরব বসন্তেরই ফল। দেশটি ইতোমধ্যে অবকাঠামোগতভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এবং নতুন করে গোষ্ঠীসমূহের মধ্যে লেগে গেছে কলহ, যা বর্তমানে যুদ্ধে রূপ নিয়েছে। সে যুদ্ধ আজ অব্দি দেখছে গোটা দুনিয়া আর ভুগছে হতভাগ্য ইয়েমেনবাসী।

এছাড়া বাহরাইনের রাজধানী মানামায় ২০১১ সালে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমন করেন প্রেসিডেন্ট কিং হামাদ বিন ঈসা আল খালিফা। দাপ্তরিকভাবে দেশটির সরকার সেখানে রাজতন্ত্র চলমান রাখলেও ব্যক্তিস্বাধীনতা সেখানে একেবারেই সীমিত। বাহরাইনে বিদ্রোহ দেখা দিলেও তা ব্যাপকতা লাভ করেনি। তবে সেখানেও পরিস্থিতি তেমন স্বাভাবিক নেই।

অনেকটা ঢাকঢোল পিটিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যম তিউনিসিয়ায় শুরু হওয়া বিপ্লবের ঢালাওভাবে প্রচার চালায়। এই বিপ্লবকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার পথ হিসেবে অভিহিত করে। কিন্তু সেই আরব বসন্তের প্রায় এক দশকের মাথায় আমরা দেখছি মধ্যপ্রাচ্যের এক অস্থিতিশীল অবস্থা।

আন্দোলনের ফলে দেশগুলোতে কেবল ক্ষমতার পরিবর্তনই হয়েছে। মিশরে মোহাম্মদ মুরসীকে অপসারণের পর এখন চলছে সামরিক বাহিনীর শাসন এবং ক্ষমতায় বসেছে জেনারেল সিসি। জনগণের স্বাধীনতা হয়েছে খর্ব। আগের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসী জেলেই মারা গেছেন। তার দলের নেতা কর্মীরা জেলেই দিনযাপন করছেন।

লিবিয়ার অবস্থা আরো খারাপ। ন্যাটোর হস্তক্ষেপের ফলে লিবিয়ার কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে এবং বিভিন্ন অঞ্চলে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন গোষ্ঠীর শাসন গড়ে ওঠে। ফলে সাধারন মানুষের জীবন হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত।

সিরিয়ায় হাজারো নারী-শিশুর আর্তনাদ নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে আজ। বাশার আল আসাদকে পরাজিত করতে যেখানে যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র সহায়তা দিচ্ছে বিদ্রোহীদের, সেখানে শাসক বাশারকে সহায়তা দিচ্ছে চীন ও ইরান। ফলে দীর্ঘায়িত হচ্ছে গৃহযুদ্ধ।

আরব বসন্ত তাই যেন সাধারন মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার দেওয়ার পরিবর্তে জীবনকে করে তুলেছে দূর্বিষহ। একইভাবে ইয়েমেনে ও বাহরাইনে সরকার পরিবর্তন হওয়ার পাশাপাশি জন্ম নিয়েছে জঙ্গি গোষ্ঠী। বিপর্যস্ত হচ্ছে জনগণের জীবন।

আরব বসন্তেকে বিভিন্ন সময়ের হিসেবে আমরা দেখলে তা অনেকটা এরকম দাড়ায়-

১৭ ডিসেম্বর ২০১০- তিউনিসিয়ায় মোহাম্মদ বুয়াজিজির স্থানীয় সরকারী অফিসের সম্মুখে আত্মাহুতি এবং পরবর্তীতে গণবিস্ফোরণ ছড়িয়ে পড়া।

১৪ জানুয়ারী ২০১১- তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট জিনে আল আবিদাইন বাগদাদীর ক্ষমতা থেকে অপসারণ ।

২৫ জানুয়ারী ২০১১- প্রথমবারের মত মিশরের তাহরীর স্কয়ারে সংঘবদ্ধরূপে গণবিস্ফোরণ ।

ফেব্রুয়ারী ২০১১- বিক্ষোভকারীদের প্রবল আক্রোশের ফলস্বরূপ সরকার বাধ্য হয়ে গণতান্ত্রিক ধারা সূচনা করা।

১১ ফেব্রুয়ারী ২০১১- মিশরে হোসনি মোবারকের পতন।

১৫ মার্চ ২০১১- সিরিয়ায় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূত্রপাত।

২২ মে ২০১১- মরোক্কোয় পুলিশ কর্তৃক হাজারো বিক্ষোভকারীর প্রতি আক্রমণ।

১ জুলাই ২০১১- মরোক্কোর ভোটারদের আন্দোলনের মুখে রাজতন্ত্রের ক্ষমতা সাংবিধানিকভাবে কমিয়ে আনার পদক্ষেপ

২০ অগাস্ট ২০১১- বিদ্রোহীদের কর্তৃক লিবিয়ার ত্রিপলিতে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে দখল।

২৩ সেপ্টেম্বর ২০১১- ইয়েমেনে লক্ষলোকের রাস্তায় নেমে আসা এবং বড় আকারে গণতন্ত্রের পক্ষে আন্দোলনের সূচনা

২০ অক্টোবর ২০১১- বিদ্রোহীদের দ্বারা লিবিয়ার একনায়ক মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে ক্ষমতা হতে অপসারণ ও নিহত হওয়া ।

২৩ অক্টোবর ২০১১- তিউনিসিয়ায় প্রথমবারের মত সাংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

২৩ নভেম্বর ২০১১- ইয়েমেনের একনায়ক আব্দুল্লাহ সালেহ ক্ষমতা ভাগাভাগির একটি দলিলে স্বাক্ষর করে। তিনি ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারীতে ক্ষমতা থেকে পুরোপুরি সরে আসেন এবং ২০১৭ সালে আততায়ী দ্বারা খুন হন । সেই থেকে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ ।

২৮ নভেম্বর ২০১১- মিশরে প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১২ এর জুনে প্রেসিডেন্ট মুরসি ক্ষমতায় আসেন এবং আকস্মিক অভ্যুত্থানের ফলে ২০১৩তে ক্ষমতা থেকে অপসারিত হন।

আরব বসন্ত আর শেষ পর্যন্ত মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে থাকেনি। যে প্রবল আশা নিয়ে এর উন্মেষ ঘটেছিল তা আজ সুদূরে বিলীন। গণতন্ত্রের সুবাতাস বইয়ে দেওয়া আর মানুষের বাকস্বাধীনতার  প্রত্যয় তাই এখন মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। আজো আরব বসন্তের ফলফল মারাত্মক সংঘাতে পর্যুদস্ত মধ্যপ্রাচ্যের লাখো মানুষের জীবন । সেসবের অবসান কবে হবে তা নিয়েই সন্দিহান গোটা বিশ্বের মানুষ।

লেখক- মাহের রাহাত

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *