পরিবেশ বিশ্ব

আমাজনে আগুন—মিলিয়ন ডলার সহায়তা প্রত্যাখ্যান ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের!1 min read

আগস্ট ৩০, ২০১৯ 3 min read

author:

আমাজনে আগুন—মিলিয়ন ডলার সহায়তা প্রত্যাখ্যান ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের!1 min read

Reading Time: 3 minutes

আমাজন জঙ্গলকে বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর ফুসফুস। তবে এই মুহূর্তে পুড়ে চলছে এই জঙ্গলের একটি বিশাল অংশ। এটা এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে মহাকাশ থেকে পর্যন্ত এই আগুনের ধোয়া দেখা যাচ্ছে। এমন ভয়ংকর সময়ে ব্রাজিল সরকার দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হল ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জনাব জেইর বলসোনারো সাতটি দেশের সমন্বয়ে গঠিত জি-৭ থেকে ২০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা গ্রহণের জন্য অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। 

পুরো বিশ্বের মানুষ এখন আমাজনের আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সোচ্চার হয়ে আছে। সবার এখন একটাই দাবি—বন্ধ করা হোক এই আগুন। আসুন আমাজন জঙ্গলের এই আগুন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই। 

মানুষই কি এই আগুন বিপর্যয়ের কারণ? 

সাধারণত আমাজনের এই ঘন জঙ্গলের আবহাওয়া অনেকটাই আর্দ্র এবং ভেজা থাকে। তবে বলা হয়ে থাকে সবচেয়ে শুকনো মৌসুম হল জুলাই এবং আগস্ট। নাসা’র মতে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে এই শুকনো মৌসুম একদমই শেষ হয়ে যায় এবং পুনরায় আমাজন ফিরে যায় তার স্বমূর্তিতে। 

এই সময়টাতে প্রায়শই চাষাবাদ এবং পশুপালনের জন্য জঙ্গলে আগুন দিয়ে অনেক জায়গা খালি করা হয়ে থাকে। “আমাজন ওয়াচ” নামে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ক্রিশ্চিয়ান পইরিয়ার সিএনএনকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলেন, ঠিক একারণেই বর্তমানে বেশীরভাগ আগুনই মানুষের সৃষ্টি বলে ধারনা করা যায়। তবে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট প্রাথমিক ভাবে কোন ধরনের প্রমাণ ছাড়াই বিভিন্ন বেসরকারি এনজিওকে এই আগুনের জন্য দায়ী করেন। 

এই আগুন আবহাওয়ার উপর ঠিক কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারে? 

বিগত ২২শে আগস্টে গ্রিনপিস নামক আবহাওয়া বিষয়ক এনজিও একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। এই বিবৃতিতে বলা হয়, আমাজন জঙ্গলের বর্তমান আগুনের কারণে গ্রিনহাউজের উপরেও প্রচুর প্রভাব পড়ছে। কেননা, আগুন বাড়ার সাথে সাথে গ্রিনহাউজ গ্যাসও বেড়ে চলছে। যার ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে এবং পরবর্তীতে আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

গ্রিনপিসের এই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “এভাবে বনায়ন ধ্বংস হওয়ার কারণে বৃষ্টিপাত কমে যাবে এবং অনেক অঞ্চলেই তীব্র ক্ষরা শুরু হয়ে যাবে। এর ফলাফল আরো তীব্র আকার ধারণ করবে যখন চাষাবাদের উপর এই আগুনের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়া শুরু করবে।”

কোন কোন অঞ্চল এই আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? 

স্যাটেলাইট হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ব্রাজিলের রোনডোনিয়া, প্যারা এবং মাটো গ্রোসো অঞ্চলে ভয়াবহ পরিমাণে আগুন লেগেছে। আমাজন ষ্টেট আছে সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায়। তবে এই ক্ষতির ফলাফল ব্রাজিল অতিক্রম করে আশেপাশের এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ছে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন।

আমাজনের এই ঘন জঙ্গল পৃথিবীর ২০ ভাগ অক্সিজেনের যোগান দেয়। যার ফলে এই ঘন জঙ্গলকে পৃথিবীর ফুসফুস বলেও গণ্য করা হয়। এই জঙ্গল যদি ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে পুরো পৃথিবীর আবহাওয়াসহ সমস্ত জীবমণ্ডলের উপরে এর প্রভাব পড়বে। এমনকি সুপেয় পানি নিয়েও মানুষকে পোহাতে হবে দুর্ভোগ। 

বর্তমানে ঠিক কি পরিমাণ আগুনে জ্বলছে আমাজনে?  

বিবিসির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার পর্যন্ত ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় পঁচিশ হাজার স্থানে আগুনে জ্বলছে আমাজনের ঘন জঙ্গল। এই আগুনের ধোয়া এমনকি মহাকাশ থেকেও বুঝা যাচ্ছে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরেই নাসা এই আগুন পর্যবেক্ষণ করে আসছে। 

২০ আগস্টে এরিক নামক একজন আবহাওয়া বিদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী দেখা গেছে যে ব্রাজিলের প্রায় অর্ধেক অংশই এই আগুনের ধোঁয়ায় ঢাকা পড়ে গেছে। পরবর্তী সপ্তাহে বিবিসি’র প্রকাশিত একটি আবহাওয়ার মানচিত্রেও একই ধরনের আভাস পরিলক্ষিত করা যায়। 

আগুন কি আদৌ নেভানো হচ্ছে? 

এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী আমাজনের ঘন জঙ্গল কেবল শুধু পুড়েই যাচ্ছে। তবে তথ্য পাওয়া গেছে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট এই আগুন নেভাতে ব্রাজিলিয়ান আর্মি ব্যবহার করবেন। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট যেখানে পুরো বিশ্বের থেকে সমালোচনা পাচ্ছেন, সেখানে তাকে সমর্থন করে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট “ডোনাল্ড ট্রাম্প” একটি টুইটে বক্তব্য প্রদান করেন যে, ব্রাজিল খুব সফলতার সাথেই আগুন নিয়ন্ত্রণ করছে। 

জি-৭ এর সহায়তা প্রত্যাখ্যান 

জি-৭ ব্রাজিলের জন্য প্রায় ২০ মিলিয়ন অর্থ সহায়তা করতে চেয়েছে। তবে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট সেই সহায়তাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। আদতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের করা একটি মন্তব্যের কারণে তিনি এমনটা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেইর বলেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মখোঁ যতক্ষণ না পর্যন্ত তার দেয়া বক্তব্যের কারণে ক্ষমা না চাচ্ছেন ততক্ষণ পর্যন্ত ব্রাজিল এই সহায়তা গ্রহণ করবে না। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলসোনারোরের অভিযোগ হল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মখোঁ তাকে মিথ্যাবাদী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।  এছাড়া ব্রাজিলীয় এই প্রেসিডেন্ট আরো অভিযোগ করেন যে সাহায্য করার আদলে আসলে বিদেশী সংস্থাগুলো আমাজন জঙ্গলের উপর নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।  

ইতোপূর্বেও চাষাবাদের জন্য ছোটখাটো আগুন লাগানো হলেও এই ধরনের বিশদাকারের আগুন কখনই আমাজন জঙ্গলে লাগেনি। আমাজন জঙ্গল প্রায় ত্রিশ লক্ষ প্রজাতির গাছপালা ও প্রাণীর অভয়ারণ্য। এই অভয়ারণ্যে এখন আর অভয়ে থাকতে পারছে না সেখানের জীব জগত। এই আগুনে শুধুমাত্র সেখানকার জীব বৈচিত্র্যেই প্রভাব ফেলছে না বরং পুরো পৃথিবীর আবহাওয়ার উপর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

লেখক- ইকবাল মাহমুদ 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *