featured বাংলাদেশ

আবরারের মৃত্যু কি পারবে আমাদের বিবেকের বৈকল্য দূর করতে?1 min read

অক্টোবর ১২, ২০১৯ 2 min read

author:

আবরারের মৃত্যু কি পারবে আমাদের বিবেকের বৈকল্য দূর করতে?1 min read

Reading Time: 2 minutes

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের নির্মম মৃত্যু বাংলাদেশের নষ্ট ছাত্র রাজনীতির প্রকৃত অবস্থার একটি খণ্ডিত চিত্র মাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অস্ত্রের ঝনঝনানি আজকে নতুন নয়। এর আগেও বহুবার ছাত্র সংগঠনগুলোর হাত রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। সরকার পরিবর্তনের সাথে ছাত্র সংগঠনের নাম পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্র সংগঠনগুলোর কার্যক্রমে তেমন ভিন্নতা দেখা যায়নি কখনোই। হত্যা, চাঁদাবাজি, হল দখল কিংবা টেন্ডার বাজির মতো কাজগুলোতে ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতা কর্মীদের নাম হরহামেশাই দেখা যায়।

মাঝে মাঝে স্বনামধন্য কিছু প্রতিষ্ঠান পৃথিবীব্যাপী সকল বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে রাঙ্কিং প্রকাশ করে। স্বাভাবিকভাবেই সেখানে বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম থাকে না। থাকবেই বা কি করে? যেখানে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা থাকে না, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে প্রশাসন পর্যন্ত কোন বিশেষ দলের দাসে পরিণত হয় সেখানে শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ কীভাবে আশা করবেন আপনি?

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দলীয় অনুগত্য বিবেচনায় উপাচার্য নিয়োগের অভিযোগও অনেক পুরনো। ছাত্র সংগঠন এবং উপাচার্যরা চলেন হাতে হাত রেখে। একে ওপরের স্বার্থে তারা চলেন সমঝোতার ভিত্তিতে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা থেকে জাহাঙ্গীরনগর শাখা ছাত্রলীগকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা ঈদ উপহার দিয়েছিলেন বলে খোদ ছাত্রলীগের নেতারাই জানিয়েছিলেন। পত্রপত্রিকা ঘাঁটলে অন্যায় করা উপাচার্যদের সংখ্যা এবং তাদের অপকর্মের তালিকা দীর্ঘ হবে কিন্তু কারো বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কোন উদাহরণ চোখে পড়বে না।

জ্ঞানের চর্চা, নতুন জ্ঞান সৃষ্টি এবং অতীতে অর্জিত জ্ঞান ধরে রাখার জায়গা বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়কে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই কথাটি যেন রুপকথায় পরিণত হয়েছে। তর্ক-বিতর্ক, মুক্ত চিন্তার ফলাফল আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে কি ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে তার সর্বশেষ প্রমাণ তো আবরার। বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত বুয়েটে পড়েই যদি আবরার মুক্তচিন্তা নিয়ে না বাঁচতে পারে, সেখানে মাঝারি বা ছোট ধরণের বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা কি হতে পারে সেটি কল্পনা করা কি কঠিন কিছু?

বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ছাত্রলীগের ঐতিহাসিক ভূমিকা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু এই ছাত্র সংগঠনটির নেতা ও কর্মীরা যে বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শের ধার ধারে না তার প্রমাণ তারা অনেকবারই দিয়েছে। দৈনিক প্রথম আলোর হিসেব বলছে ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের নিজেদের কোন্দলে নিহত হয় ৩৯ জন। আর এই সময়ে ছাত্রলীগের হাতে প্রাণ হারায় অন্য সংগঠনের ১৫ জন।

অস্ত্র এবং আইন নিজের হাতে তুলে নিতে এই সব ছাত্র নেতারা সমান পারদর্শী। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো পুলিশ প্রশাসনও তাদের হাতের মুঠোয়। আবরারকে শিবির সমর্থক সন্দেহে বেধড়ক পেটানোর মাঝেই কিন্তু ছাত্রলীগের নেতারা পুলিশকে ফোন দিয়ে ডেকে এনেছিল আবরারকে তাদের হাতে তুলে দিতে। চকবাজার থানার উপপরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন রাত দেড়টায় হলে যান। কিন্তু বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান রাসেলের বাধায় তিনি হলে অভ্যর্থনাকক্ষে ঘণ্টাখানেক বসে থেকে ফিরে যান। আবরারকে মারধর করা হচ্ছে জেনেও পুলিশ সেদিন হলের ভেতরে ঢোকার সাহস করতে পারেনি। এই লজ্জা আমরা কীভাবে সহ্য করি?

বিশ্ববিদ্যালয়ের জৌলুশপূর্ণ, সীমাহীন ক্ষমতা আর কালো টাকার রাজনীতি ছাত্রদের বানিয়েছে খুনি, অনেক অসহায় মা-বাবাদের করেছে সন্তানহারা। কিন্তু যাদের পৃষ্ঠপোষকতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা দানবে পরিণত হয়, তারা নিজেদের ক্ষুদ্র ব্যক্তি স্বার্থে সব দেখে শুনে বুঝেও কীভাবে নির্বিকার থাকেন সেটি একটি দুর্বোধ্য রহস্যই বটে।

আজকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে ভয়ের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তাতে অন্যায়ের প্রতিবাদ না করা সাধারণ ছাত্র সমাজের দায়ও কম নয়। ছাত্র সংগঠন করা গুটি কয়েক নেতা কর্মীদের অস্ত্র বা ক্ষমতার কাছে কীভাবে এত বিশাল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীরা জিম্মি থাকতে পারে? আজকের ছাত্র রাজনীতি করা খুনি ছেলেটিও কিন্তু আমাদেরই কারও ভাই বা বন্ধু ছিল। কেন আমরা তাকে বাধা দিতে পারলাম না? দেশ বা সমাজের যা ইচ্ছে হোক, নিজে বাঁচলেই হলো এই চিন্তা থেকে আমরা কবে বের হয়ে আসবো? ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা আর শহীদদের প্রতি এটা কি আমাদের প্রতারণা নয়?

আর কত ছাত্র জীবন হারালে এই নষ্ট ছাত্র রাজনীতির পৃষ্ঠপোষক ও প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলা আমাদের মৃতপ্রায় বিবেক জেগে উঠবে?

লেখক- হাসান উজ জামান 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *