“আত্মহত্যা “- এই ছোট শব্দটির সাথে জড়িয়ে থাকে অনেক বোবা কষ্ট, আক্ষেপ আর অজানা অনেক কাহিনী। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন এর রিপোর্ট অনুসারে, প্রতি ৪০ সেকেন্ডে বিশ্বের কোথাও না কোথাও একজন ব্যক্তি আত্মহত্যা করে। সাধারণত, দরিদ্র দেশগুলোতে আত্মহত্যার হার বেশি হলেও আশ্চর্যজনক ভাবে এই তালিকায় অনেক উন্নত দেশের নামও রয়েছে।
সাধারণত আত্মহত্যার প্রবণতা মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের মধ্যে তিনগুণ বেশি দেখা যায়। অধিকাংশ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে বিষপান, ফাঁসিতে ঝোলা বা গায়ে আগুন লাগানোর মাধ্যমে। আজ আমরা এমন দশটি দেশ সম্পর্কে আপনাদের জানাবো যে দেশসমূহে আত্মহত্যার হার পুরো পৃথিবীর মধ্যে সর্বোচ্চ।
গায়ানা
দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর–পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত গণহত্যার জন্য কুখ্যাত গায়ানায় প্রায় ৭৭৭,০০০ লোকের বাস৷ গায়ানায় আত্মহত্যার হার পুরো বিশ্বের আত্মহত্যা হারের গড় থেকে চারগুণ বেশি। দারিদ্র্যতা, মাদক ও বিষাক্ত কীটনাশকের সহজলভ্যতা এই দেশে আত্মহত্যার মূল কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। সমীক্ষায় দেখা গেছে, গায়ানায় প্রতি বছর ১,০০,০০০ জনের মধ্যে ৪৪ জন আত্মহত্যা করে৷
গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া
দক্ষিণ কোরিয়ার উত্তর–পূর্ব প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়ায় আত্মহত্যার হার ডব্লুএইচও এর পরিসংখ্যান অনুসারে দিনে দিনে বেড়েই চলেছে৷ সীমাবদ্ধ পরিবেশ, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, অর্থনৈতিক মন্দা এবং মানসিক চাপের কারণে দেশটিতে প্রতি বছর ১০,০০০ এর বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে। এমনকি সরকার কর্তৃক শাস্তি এড়াতে পুরো পরিবার এক সাথে আত্মহত্যা করেছে এমন ঘটনাও অহরহ ঘটছে উওর কোরিয়ায়।
দক্ষিণ কোরিয়া
নাগরিকদের জন্য দ্রুততম ইন্টারনেট সংযোগ, আধুনিক প্রযুক্তি, মানসম্মত শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবাসহ অন্যান্য সকল সুবিধা সহজলভ্য হওয়ার পরেও দক্ষিণ কোরিয়ায় মারাত্মকভাবে আত্মহত্যার হার বাড়ছে। সামাজিক চাপ এবং পারিবারিক সমস্যা এই দেশে আত্মহত্যার মূল কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই দেশটিতে বিষপানে আত্মহত্যার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। আত্মহত্যার হারের ভিত্তিতে এখানে প্রতি বছর ১,০০,০০০ জনে ১৫ জন মহিলা ও ৩২ জন পুরুষ আত্মহত্যা করে।
শ্রীলঙ্কা
দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ২ কোটি মানুষের ছোট দেশ শ্রীলঙ্কা। ১৯৪৮ সালে শ্রীলঙ্কা তার স্বাধীনতা অর্জন করার পর থেকে কোন স্পষ্ট কারণ ছাড়াই দেশটিতে আত্মহত্যার সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশটিতে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা ঘটে বিষপান ও ফাঁসির মাধ্যমে। শ্রীলঙ্কার সর্বশেষ সমীক্ষা অনুযায়ী আত্মহত্যার সংখ্যা প্রতি ১,০০,০০০ জনে ১৫।
লিথুয়ানিয়া
আত্মহত্যার হারের দিক থেকে লিথুয়ানিয়া ইউরোপের সবচেয়ে আত্মঘাতী দেশ এবং বিশ্বের পঞ্চমতম। ১৯৯০ এর দশকের শেষের সময় থেকে দেশটিতে আত্মহত্যা একটি উল্লেখযোগ্য সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৭ সালে আত্মহত্যার হার ছিলো প্রতি ১,০০,০০০ জনে ২৬.৪ (৫১.০ পুরুষ – ৮.৪ জন মহিলা)। তবে, আত্মহত্যার সংখ্যা ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। লিথুয়ানিয়ায় সামাজিক ও আর্থিক সমস্যা আত্মহত্যার উচ্চ হারের পেছনের প্রধান কারণ হিসাবে বিবেচিত হয়।
সুরিনাম
সুরিনাম দক্ষিণ আমেরিকার মাত্র দুটি দেশের মধ্যে একটি যা আত্মহত্যার এই দুঃখজনক পরিসংখ্যানটিতে স্থান পেয়েছে। ৫,৭০,০০০ বাসিন্দার ছোট দেশটি তীব্র সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত। দারিদ্র্যতা, মাদকাসক্তি, গৃহযুদ্ধ, বেকারত্বের মতো সমস্যার কারণে সুরিনামে প্রতি ১,০০,০০০ লাখের মধ্যে প্রতিবছর ৪৪ জন পুরুষ ও ১২ জন মহিলা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
মোজাম্বিক
দক্ষিণ–পূর্ব আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকে প্রতি ১,০০,০০০ স্থানীয় লোকের মধ্যে ২৭ জন প্রাণনাশের সিদ্ধান্ত নেয়। অপর্যাপ্ত চিকিৎসার কারণ হেতু মোজাম্বিকের বাসিন্দাদের গড় আয়ু কম হয়। এইডস ও অন্যান্য রোগের করাল গ্রাস থেকে মুক্তির আর কোন পথ খুঁজে না পেয়ে প্রতি বছর দেশটিতে গড়ে ৩,০০০ লোক আত্মহত্যা করে।
ইউনাইটেড প্রজাতন্ত্রের তানজানিয়া
তানজানিয়ার ৪৫ মিলিয়ন বাসিন্দাকে দারিদ্র্যতা, ক্ষুধা, সহিংসতা, স্বাস্থ্যসেবার অভাব, এইচআইভি সংক্রমণ সহ বিভিন্ন বড় ধরনের সমস্যায় মধ্য দিয়ে দিন কাটাতে হয়, যা পূর্ব আফ্রিকার এই দেশে আত্মহত্যার হার বৃদ্ধির জন্য দায়ী। পারিবারিক সমস্যা, চাপ, স্কুলে ব্যর্থতা এবং অন্যান্য কারণে তানজানিয়ার স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়ের মধ্যেও আত্মহত্যার প্রবণতা লক্ষ্যণীয়। ২০১৬ সালে এই দেশে আত্মহত্যার হার ছিলো প্রতি ১,০০,০০০ এ ৫.৪। ২০১৭ সালে তা বেড়ে ১০.৮১ এ উপনীত হয়েছে এবং একই বছর মোট ৩,৭৩৫ জন আত্মহত্যা করেছিলো।
নেপাল
দক্ষিণ এশিয়ার হিমালয়ের দেশ নেপালে “আত্মহত্যা ” নামক শব্দটির প্রভাব ক্রমেই বেড়েই চলেছে। ২০১৫ সালে নেপালে আত্মহত্যার হার ছিলো ২৪.৯ (৩০.১ পুরুষ – ২০.০মহিলা)। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, নেপালি নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রয়াস নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। ২০১৮–১৯ সালে নেপালে আত্মহত্যা করেছে ১৩২০ জন।
কাজাকিস্তান
মধ্য এশিয়ায় অবস্থিত বৃহৎ দেশ কাজাকিস্তানে আত্মহত্যা একটি দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক সমস্যা। ডাব্লুএইচও–র ২০১১ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী আত্মহত্যার ফলে মারা যাওয়া লোকজনের মধ্যে ৩.২৩% কাজাখস্তানের অন্তর্গত। দেশটিতে তরুণ এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশেষ করে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মেয়েদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি।