বিশ্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

আকায়েদ উল্লাহর বিচারে দীর্ঘসুত্রিতা1 min read

এপ্রিল ৩০, ২০১৮ 3 min read

আকায়েদ উল্লাহর বিচারে দীর্ঘসুত্রিতা1 min read

Reading Time: 3 minutes

আকায়েদ উল্লাহর বিচারে  দীর্ঘসুত্রিতা

সাহেদ আলম

বাংলা ইনফোটিউব: এখনই সন্ত্রাসী হিসেবে নিজের দোষ স্বীকার না করে বরং ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য বিচারিক লড়াই চালিয়ে যেতে চান আকায়দে উল্লাহ। শুধু তাই নয়, গ্রেফতারের পর পরই হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে দেয়া তার আগের বিবৃতি প্রত্যাহার করার জন্য আবেদন করবেন তিনি। গত ডিসেম্বরের ১১ তারিখ ম্যানহাটানের পোর্ট অথরিটি বার্স টার্মিনালে পাইপ  বোমা বিষ্ফোড়নে হাতে নাতে ধৃত হন বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত এই অভিবাসী । ঐ বিষ্ফোড়নে একমাত্র আকায়েদ নিজেই মারাত্বক ভাবে আহত হন।

 

১৭ এপ্রিল তার আদালতে শুনানী ছিল, সেখানে আগের মতই দোষ স্বীকারে অনিহা প্রকাশ করেছেন তিনি। যদিও, তার বিরুদ্ধে ৬ষ্ট ডিগ্রি অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে, যার একটি হলো, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অংশ হিসেবে সন্ত্রাসী বাহিনীকে সহযোগীতা প্রদান। আগামি অক্টোবর পর্যন্ত তার শুনানী পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এবং এই বিচারকাজ নিউইয়র্কের বাইরে স্থানান্তর করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবি।

 

বিচারক রিচার্ড জুলিভান এর আদালতে  ২৬৩ ঘন্টার ভিডিও ফুটেজ আদালতে সরবারহ করেছেন আকায়াদের আইনজীবি এ্যামি গ্যালিসিও। এই তথ্য প্রমানাদি দিয়ে আকায়েদের পক্ষে দাবী করা হয়েছে, যে এখন পর্যন্ত আকায়েদ এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগে কেবল বাহ্যিক দিকগুলি বিবেচনা করা হয়েছে, এবং সেগুলি দিয়েই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠিত হয়েছে। আদালত তার শুনানী পিছিয়ে দিলেও, তাকে দূর্ধর্ষ অপরাধের শাস্তি হিসেবে ম্যানহাটান কারাগারের নির্জন কক্ষে স্থানান্তরিত করেছে, যেখানে অন্য কোন কয়েদির সাথে মেলা মেশার সুযোগ পাবেন না আকায়েদ উল্লাহ। এই খবর দিয়েছে নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজ।

 

২৮ বছর বয়সী বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত অভিবাসী আকায়েদ উল্লাহ, গত বছরের ডিসেম্বরের ১১ তারিখে টাইম স্কয়ারের কাছে ১ ফুটের মত লম্বা একটি পাইপ বোমা বিষ্ফোড়নে আহত হয়ে ধরা পড়েন। ঐ ঘটনার ১১ ঘন্টা আগে আকায়েদ ফেসবুকে’ ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে স্টাটাস লেখেন’। এর বাইরে তার নিজের পার্সপোর্টে ‘আমেরিকা তুমি ধংশ্ব হও’ বলে লেখা ঘৃনাসুচক বাক্য লিখে রেখেছিলেন। এসব পূর্ব প্রমানাদি, তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটানোর জন্য নিজ নিজ প্রশিক্ষন চর্চা, আর বিষ্ফোড়ন ঘটনা-এই তিন এর সন্নিবেশে তার বিরুদ্ধে ৬ষ্ট মাত্রার সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগ আনা হয়। যেটা এর আগের জানুয়ারীর ১১ তারিখের শুনানীতে অস্কীকার করেন আকায়েদ। তৃতীয় দফার এই শুনানীতে তিনি ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য, লড়াই চালিয়ে যেতে আবেদন করেছেন।

 

গত ১৭ এপ্রিল বুধবার যখন তাকে আদালতে হাজির করা হয়, তখনও আকায়দে পুরোপুরি সুস্থ হননি। তার শরীরে দেয়া সেলাই গুলো এখনো শুকায়নি বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবি।

 

আদালতে দেয়া তথ্য প্রমানাদি এবং তার আগেকার কথা বার্তা, সোস্যাল মিডিয়ায় ব্যবহৃত পোষ্ট সব কিছু বিবেচনা করে তাকে আপাতত অপরাধী হিসেবে বর্নণা করা হলেও, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের হোতা হিসেবে আকায়েদ এর স্বীকারোক্তি আদায় ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার পথে একটি বড় ধাপ বলে বলছে আমেরিকার গনমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন গুলি।

বাংলাদেশী বংশোদ্ভত আকায়েদ পারিবারিক অভিবাসনে তার চাচার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন, ৭ বছর আগে। এখনও বাংলাদেশে তার স্ত্রী এবং এক বছর বয়সী একটি সন্তান আছে। হাজারী বাগে একটি গ্রোসারী দোকানের মালিক তার বাবা। পড়াশুনা করেছেন কাকলী বিদ্যালয় এবং ঢাকা সিটি কলেজে এ। নিউইয়র্কের  ব্রকুলিনের ফ্লাটল্যান্ড এলাকায় তার বসবাস ছিল । প্রথমে এসে আকায়েদ ট্যাক্সি চালক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এর পরে, ইলেক্ট্রিশয়ান হিসেবে কাজ শুরু করেন। ঐ কাজ করার সময়, ইউটিউবে ভিডিও দেখে নিজে নিজে পাইপ বোমা তৈরী করা শিখে যান আকায়েদ উল্লাহ। এই পাইপ বোমা তৈরীর জন্য যেসব সরন্জামাদি লাগে সেগুলি নিজেই ক্রয় করেন তিনি। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের দেয়া প্রমানাদিতে এসব ঘটনার বিরবণ আছে।

 

এদিকে, ব্রকলিনে আকায়েদ এর বসবাস স্থলের কাছের মসজিদ আল নূর-এর ঈমাম গওহর আহমেদ এর সাথে তার উঠাবসা ছিল বলে এর আগে এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরী করেছিল নিউইয়র্ক টাইমস। মসজিদ কমিটির প্রেসিডেন্ট জানিয়েছিলেন, সেপ্টেম্বর ১১ এর টুইন টাউয়ারে সন্ত্রাসী হামলার পরে, আমেরিকা বিরোধী নানা বক্তব্যের জন্য গওহরকে এফবিআই একবার জিঙ্গাসাবাদ করেছিল। এ মসজিদ টিকে এফবিআই তাদের নজরদারীর মধ্যেই রেখেছিল, এবং অন্তত ৪ জন ব্যাক্তিকে বিপদজনক হিসেবে শনাক্ত করেছিল। আকায়েদ এর সাথে মসজিদের ঈমামের ঘনিষ্টতাও তার সন্ত্রাসী হিসেবে বেড়ে উঠার একটি ক্ষেত্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে আকায়েদ এর অভিযোগ পত্রে।

 

সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত নানা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মধ্যে আকায়েদ উল্লাহ’র বোমা বিষ্ফোড়ন ঘটনাটি এখনও অনেক আলোচিত বিষয়। কেননা, ঐ ঘটনায় প্রথমবার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে প্রথমবার বাংলাদেশী কমিউনিটির নাম চলে আসে গনমাধ্যমে। আর আকায়েদ কান্ডের পরে সংবাদ ব্রিফিং এ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, পারিবারিক অভিবাসন বন্ধ  অথবা সীমিত করতে প্রস্তাব রাখেন।

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *