অস্ত্র বাণিজ্যের শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান—প্রধান ক্রেতা সৌদি আরব1 min read
Reading Time: 3 minutesবর্তমানে অস্ত্র ব্যবসা অন্যান্য অনেক ধরনের ব্যবসা থেকেই বহুল আলোচিত। আর এটা কেনই বা হবে না? আন্তর্জাতিক শান্তি ও গবেষণা অনুষদ SIPRI এর সিনিয়র গবেষক পিটার উয়েজমেনের মতে, প্রতি বছর প্রায় ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের অস্ত্র বাণিজ্য হচ্ছে। এই বাণিজ্যের শীর্ষে অবস্থান করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমান সময়ে সৌদি আরব হল আমেরিকার অস্ত্র বাণিজ্যের সবচাইতে বড় ক্রেতা। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত আমেরিকা যে পরিমাণ অস্ত্র রপ্তানি করেছে তার প্রায় অর্ধেক পরিমাণ ক্রয় করেছে সৌদি আরব।
রাশিয়া থেকে প্রায় ৫৮% বেশি অস্ত্র রপ্তানি করে আমেরিকা, উল্লেখ্য যে রাশিয়া অস্ত্র বাণিজ্যে বর্তমানে আমেরিকার পরে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে। ২০১৭ সালে সারা বিশ্বে যে পরিমাণ অর্থের অস্ত্র বিক্রয় হয়েছে তার প্রায় ৫৭ ভাগ অর্থ জমা পড়েছে আমেরিকার কোষাগারে।
SIPRI একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করেছে যে ২০১৭ সালেই পুরো বিশ্বে প্রায় ৩৯৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের অস্ত্র বিক্রয় হয়েছে। এই অস্ত্র বিক্রয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র আমেরিকার ৪২ টি অস্ত্র কোম্পানির কাছেই গিয়েছে ২২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, সুতরাং বুঝতেই পারছেন অস্ত্র বিক্রয়ে প্রথম স্থানে কে আছে এবং ঠিক কতটা এগিয়ে আছে তারা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লকহিড আর্টিন নামক অস্ত্র কোম্পানি একাই বিক্রয় করেছে প্রায় ৪৪ বিলিয়ন ডলার। একক কোম্পানি হিসেবে এত বিপুল পরিমাণ অস্ত্র আর কেউ বিক্রয় করতে পারেনি। সামরিক বাহিনীগুলোর মধ্যে অত্যাধুনিক অস্ত্রের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণেই লকহিডের অস্ত্র বিক্রয় সবচাইতে বেশি। নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদন অনুসারে ২০১৫ অর্থ বছরে প্রায় ৮০ বিলিয়ন সমমূল্যের অস্ত্র বিক্রয় হয়েছে সারা বিশ্বে। তন্মধ্যে কেবলমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই প্রায় ৪০ বিলিয়ন সমমূল্যের অস্ত্র বিক্রয় করেছে।
এখন প্রশ্ন হল এই অস্ত্র যাতে বেশি বিক্রি হয় সেজন্য কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোন ধরনের পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ ইন্ধন যোগাচ্ছে? এই সম্পর্কে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ বলেন, অস্ত্র বিক্রয় করে প্রচুর পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করছে আমেরিকা এবং এই অস্ত্র বিক্রয়ের জন্যই তারা বিশ্বের অনেকগুলো অঞ্চলকে অশান্ত করে রাখার জন্য ইন্ধন দিচ্ছে। এছাড়া জাওয়াদ জারিফ আরও বলেন, এই পরিমাণ অস্ত্র বিক্রয় করার কারণেই বিশ্ব শান্তি এখন রীতিমতো প্রায় হুমকির মুখে।
ইয়েমেনের যুদ্ধ এবং আমেরিকার অস্ত্র ব্যবসা
বিগত ১০ বছরে অস্ত্র ব্যবসা প্রায় দ্বিগুণ আকার ধারণ করেছে, সিরিয়া এবং ইয়েমেনের যুদ্ধ তার অন্যতম কারণ। এই যুদ্ধ সম্পর্কে ইউনাইটেড ন্যাশন বলে, মানুষের তৈরি দুর্যোগের মধ্যে এটাই সবচাইতে বেশি ভয়ংকর। ২০১৫ সালে ইয়েমেনে এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সৌদি আরবসহ অন্যান্য আরো আটটি আরব দেশ ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদিকে বিপুল পরিমাণ সহযোগিতা করে। এই যুদ্ধে সাধারণ মানুষ যতটাই ভোগান্তি পোহাচ্ছে ঠিক ততটাই রমরমে অবস্থা চলছে অস্ত্র ব্যবসায়ীদের। আর এ কথা বলাই বাহুল্য যে এই যুদ্ধের কারণে কেবল মাত্র অস্ত্র বিক্রয় করেই সবচাইতে বেশি লাভবান হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের অবস্থানকে কেন্দ্র করে এই অস্ত্র ব্যবসার শীর্ষে অবস্থান করছে আমেরিকা।
আমেরিকার প্রধান অস্ত্র ক্রেতা সৌদি আরব
২০১১ সাল থেকেই আমেরিকার অস্ত্র বাণিজ্য একদম ফুলে ফেঁপে উঠে, তার কারণ হিসেবে সহজেই সৌদি আরবের নামই অনুমান করা যায়। ২০১১ সালে আমেরিকার অস্ত্র বাণিজ্যের ক্রেতার খাতায় নাম লিখিয়েছে সৌদি আরব। সৌদি আরবের সাথে সাথে আরব আমিরাত এবং ওমানও প্রচুর পরিমাণ অস্ত্র ক্রয় করেছে আমেরিকা থেকে। মার্কিন কংগ্রেশনাল থেকে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট দেখলেই পুরো বিষয়টি সামনে চলে আসবে। রিপোর্টে বলা আছে কেবলমাত্র সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রয় করতে পেরেই আমেরিকায় প্রায় পঁচাত্তর হাজার কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। বুঝাই যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির অন্যতম একটি হাতিয়ার হল এই অস্ত্র ব্যবসা। এছাড়া সেই রিপোর্টে আরো বলা আছে যে ২০১১ সালে বিশ্বে অস্ত্র বিক্রয়ের মধ্যে আটাত্তর ভাগ অস্ত্র বিক্রয় করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র বাণিজ্য নিয়ে হয়ত বিশ্ব মিডিয়াতে কিছুদিন পরপর হাতে গোনা দুই একটা প্রতিবেদন দেখা যায়। তবে দেখা যায় না এর বিরুদ্ধে এক জোট হয়ে সরব উপস্থিতি। কেবলমাত্র ২০১৮ সালের জুলাই মাসে একটি ভিডিও বেশ আলোচিত হয়েছিল। সেখানে দেখানো হয়েছিল বিগত ৬৭ বছর ধরে হাজার হাজার কোটি টাকার অস্ত্র বাণিজ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে তার সরব উপস্থিতি নিয়ে বিরাজ করছে।
বিশ্ব শান্তি নিয়ে কথা বলা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন বর্তমানে প্রতি বছর ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি পরিমাণ অস্ত্র বিক্রয় করছে তখন এটা খুব সহজেই অনুমান করা যায় যে বিশ্ব শান্তি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বিপরীতমুখী। তবে আশ্চর্য হলেও সত্য বিশ্ব মিডিয়াতে এইসব নিয়ে তেমন কোন হৈচৈ নেই, ইয়েমেনে হাজার হাজার মানুষ যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পরোক্ষ ইন্ধনে মারা যাচ্ছে তা নিয়ে নেই কোন আন্তর্জাতিক চাপ।